
সত্য করি বলো আমার মা কেমন আছে।
তুমি নিঠুর হয়ে কুঠুর মনে পাসরিলা ঝি।
সত্য দোষারোপে ভালোমত উত্তর জোগায় না বলিয়া রাগ বেশি হয়। গিরিরাজ সুযোগ পাইলে শিবনিন্দা করিতে ছাড়েন না; এ কথার প্রতিবাদ করিতে না পারিয়া রুষ্ট হইয়া বলিয়া উঠিলেন-
মা, তুমি বল নিঠুর কুঠুর, শম্ভু বলেন শিলা।
তখন শুনে কথা জগৎমাতা কাঁদিয়া অস্থির।
নয়নজলে ভেসে চলে, আকুল হল নন্দী-
কৈলাসেতে মিলল ঝরা, হল একটি নদী॥
কেঁদো না মা, কেঁদো না মা ত্রিপুরসুন্দরী।
কাল তোমাকে নিয়ে যাব পাষাণের পুরী॥
সন্দেশ দিয়েছিলেন মেনকারানী, দিলেন দুর্গার হাতে।
উমা কন শুন বাবা, বোসো পুনর্বার।
জলপান করিতে দিলেন নানা উপহার॥
যত্ন করি মহেশ্বরী রানুন করিলা।
শ্বশুর জামাতা দোঁহে ভোজন করিলা॥
ছড়া যাহাদের জন্য রচিত তাহারা যদি আজ পর্যন্ত ইহার ছন্দোবন্ধ ও মিলের বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি না করিয়া থাকে, তবে আমাদের বলিবার কোনো কথাই নাই; কিন্তু জামাতৃগৃহে সমাগত পিতার সহিত কন্যার মান-অভিমান ও তাহার শান্তি ও পরে আহার-অভ্যর্থনা–এই গৃহচিত্র যেন প্রত্যক্ষের মতো দেখা যাইতেছে। নন্দীটা এক পাশে দাঁড়াইয়া ছিল, সে মাঝে হইতে আকুল হইয়া গেল। শ্বশুরজামাতা ভোজনে বসিয়াছেন এবং গৌরী স্বহস্তে রন্ধন করিয়া উভয়কে পরিবেশন করিতেছেন, এ চিত্র মনে গাঁথা হইয়া রহিল।
ইচ্ছা হয় যে বাপের বাড়ি কাল যাইব আমি॥
শুন গৌরী কৈলাসপুরী তুচ্ছ তোমার ঠাঁই।
দেখছি তোমার কাঙাল পিতার ঘর-দরজা নাই॥
শেষ দুইটি ছত্র বুঝিতে একটু গোল হয়; ইহার অর্থ এই যে তোমার বাসের পক্ষে কৈলাসপুরীই তুচ্ছ, এমন স্থলে তোমার কাঙাল পিতা তোমাকে স্থান দিতে পারেন এমন সাধ্য তাঁহার কী আছে।
পতিকে লইয়া পিতার সহিত বিরোধ করিতে হয়, আবার পিতাকে লইয়া পতির সহিত বিবাদ বাধিয়া উঠে, উমার এমনি