সে-কথা কি অকারণে ব্যথিছে হৃদয়—
একি ভয়, একি জয়।
সে-কথা কি কানে কানে বারে বারে কয়
‘আর নয়, আর নয়’।
সে-কথা কি নানাসুরে
বলে মোরে, 'চলো দূরে'—
সে কি বাজে বুকে মম, বাজে কি গগনে,
কী জানি, কী জানি!
বাসবী। মালতী, তোমার চোখে যে জল ভরে এল। এ-গানের মধ্যে কী বুঝলে বলো তো।
মালতী। শ্রীমতী ডাক শুনেছে।
বাসবী। কার ডাক?
মালতী। যার ডাকে আমার ভাই গেল চলে। যার ডাকে আমার—
বাসবী। কে, কে তোমার?
শ্রীমতী। মালতী, বোন আমার, চুপ, আর বলিসনে। চোখ মুছে ফেল্, এ কাঁদবার জায়গা নয়।
বাসবী। শ্রীমতী, ওকে বাধা দিলে কেন? তুমি কি মনে ভাব আমরা কেবল হাসতেই জানি?
ভদ্রা। আমরা কি একেবারেই জানিনে হাসি কোন্ জায়গায় নাগাল পায় না?
মালতী। রাজকুমারী, আজ তো বাতাসে বাতাসে কথা চলছে তোমরা শোননি?
নন্দা। সকালের আলোতে পদ্মের পাপড়ি খুলে যায়, কিন্তু রাজপ্রাসাদের দেয়াল তো খোলে না।
লোকেশ্বরীর প্রবেশ। সকলের প্রণাম
লোকেশ্বরী। আমি সহ্য করতে পারছি নে। ওই শুনছ না রাস্তায় রাস্তায় স্তবের ধ্বনি— ওঁ নমো বুদ্ধায় গুরবে, নমঃ সংঘায় মহত্তমায়। শুনলে এখনো আমার বুকের ভিতর দুলে ওঠে।
(কানে হাত দিয়া) আজই থামিয়ে দেওয়া চাই। এখনই! এখনই!
মল্লিকা। দেবী শান্ত হন।
লোকেশ্বরী। শান্ত হব কিসে? কোন্ মন্ত্রে শান্ত করবে? সেই, নমঃ পরমশান্তায় মহাকারুণিকায়— এ মন্ত্র আর নয়, আর নয়। আমার মন্ত্র, নমো বজ্রক্রোধডাকিন্যৈ, নমঃ শ্রীবজ্রমহাকালায়। অস্ত্র দিয়ে আগুন দিয়ে রক্ত দিয়ে জগতে শান্তি আসবে। নইলে মার কোল ছেড়ে ছেলে চলে যাবে, সিংহাসন থেকে রাজমহিমা জীর্ণপত্রের মতো খসে খসে পড়বে।— তোমরা কুমারীরা এখানে কী করছ?
রত্নাবলী। (হাসিয়া) অপেক্ষা করছি উদ্ধারের। মলিন মনকে নির্মল করে এই শ্রীমতীর শিষ্যা হবার পথে একটু একটু করে এগোচ্ছি।
বাসবী। অশ্রাব্য তোমার এই অত্যুক্তি।
লোকেশ্বরী। এই নটীর শিষ্যা। শেষকালে তাই ঘটাবে, সেই ধর্মই এসেছে। পতিতা আসবে পরিত্রাণের উপদেশ নিয়ে। শ্রীমতী