ও! বকশিশ! সেটা চুকিয়ে দেওয়াই ভালো। যখন এতই করলেম তখন সর্বশেষে ঐ খুঁতটুকু আর রাখব না। কিন্তু আমার কাছে আর একটিমাত্র টাকা বাকি আছে। তার মধ্যে বারো-আনা আমি গাড়িভাড়ার জন্যে রেখে দিতে চাই। তোমার কাছে খুচরো, যদি কিছু থাকে তা হলে ভাঙিয়ে—
খুচরো নেই? ( পকেট উলটাইয়া শেষ টাকাটি দিয়া) তবে এই নাও বাপু। তোমাদের বাড়ি থেকে বেরোলুম একেবারে গজভুক্তকপিত্থবৎ।
কিন্তু এই-যে টাকাগুলি দিলুম, উদয়ের কাছ থেকে ফিরে আদায় করবার কী উপায় করা যায়! একটা দামি জিনিস যদি কিছু পাওয়া যায় তো আটক করে রাখি। দামি জিনিসের মধ্যে তো দেখছি ঐ চন্দ্রকান্ত; কিন্তু যেরকম দেখলুম ওঁকে সংগ্রহ করা আমার কর্ম নয়, আমাকে উনি ট্যাঁকে গুঁজে নিতে পারেন।
(কোণে একটা দেরাজ সবলে খুলিয়া) বাঃ, এই তো ঠিক হয়েছে। চেনটিও দিব্যি। তা হলে ঘড়িসুদ্ধ এইটি দখল করা যাক।
কী হে চন্দ্র, এত ব্যস্ত কেন?
পুলিস! পুলিস আসছে?
আমাকে পালাতে হবে? কেন, কী দুষ্কর্ম করেছি! কেবল এক ভদ্রলোকের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছি, তার যা শাস্তি যথেষ্ট হয়েছে।
তাই তো সত্যিই দেখছি! চন্দ্র কোথায় গেল! হরিবাবুর সেই লোকটিকেও যে দেখছি নে! সবাই পালিয়েছে!
দেখো বাপু, গায়ে হাত দিয়ো না। ভালো হবে না। আমি ভদ্রলোক। চোর নই, জালিয়াত নই।
উঃ, কর কী! লাগে যে! বাবা, আজ সমস্ত দিন কেবল মুড়ি খেয়ে পথ চেয়ে আছি, আজ তোমাদের এ-সব ঠাট্টা আমার ভালো লাগছে না।
পেয়াদা-বাবা, বরঞ্চ কিছু জলপানি নাও। ( পকেটে হাত দিয়া) হায় হায়, একটি পয়সা নেই। দারোগা-সাহেব, যদি চোর ধরতে চাও, চলো আমি তোমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি। জেল সৃষ্টি হয়ে পর্যন্ত এতবড়ো চোর পৃথিবীতে দেখা দেয় নি।
কী করেছি বলো দেখি। জীবনবাবুর নাম সই করে হ্যামিল্টনের দোকান থেকে ঘড়ি এনেছি? পেয়াদা-সাহেব, ভদ্রলোক হয়ে ভদ্রলোকের নামে ফস করে এতবড়ো অপবাদটা দিলে?
ও কী ও! ওটা ধরে টেনো না। ও আমার ঘড়ি নয়। শেষকালে যদি চেন-মেন ছিঁড়ে যায় তা হলে আবার মুশকিলে পড়তে হবে।
কী? এই সেই হ্যামিল্টনের ঘড়ি? ও বাবা, সত্যি নাকি! তা, নিয়ে যাও, নিয়ে যাও, এখনি নিয়ে যাও। কিন্তু, ঘড়ির সঙ্গে আমাকে সুদ্ধ টান কেন? আমি তো সোনার চেন নই। আমি সোনার অক্ষয় বটে, কিন্তু সেও কেবল বাপ-মায়ের কাছে।
তা, নিতান্তই যদি না ছাড়তে পার তো চলো। বাবা, আমাকে সবাই ভালোবাসে, আজ তার বিস্তর পরিচয় পেয়েছি, এখন তোমার ম্যাজিস্ট্রেটের ভালোবাসা কোনোমতে এড়াতে পারলে এ যাত্রা রক্ষে পাই। –
যদি জোটে রোজ
এমনি বিনি পয়সায় ভোজ।