কমলমুখী। আপনার কথায় আমি বড়ো নিশ্চিন্ত হলুম। আমার একটা মস্ত ভার দূর হল। আপনাকে আর বেশিক্ষণ আবদ্ধ করে রাখতে চাই নে, আপনার বোধ করি অনেক কাজ আছে—
বিনোদবিহারী। না না, সে জন্যে আপনি ভাববেন না। আমার সহস্র কাজ থাকলেও সমস্ত পরিত্যাগ করে আমি—
কমলমুখী। তা হলে আমার কর্মচারীদের কাছ থেকে আপনি সমস্ত বুঝে পড়ে নিন। নিবারণবাবু এখনই আসবেন, তিনি এলে তাঁর কাছ থেকেও অনেকটা জেনেশুনে নিতে পারবেন।
বিনোদবিহারী। নিবারণবাবু?
কমলমুখী। আপনি তাঁকে চেনেন বোধ হয়, কারণ তিনিই প্রথমে আপনার জন্যে আমার কাছে অনুরোধ করে দিয়েছেন।
বিনোদবিহারী। (স্বগত) ছি ছি ছি, বড়ো লজ্জা বোধ হচ্ছে। আমি কালই আমার স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে আসব। এখন তো আমার কোনো অভাব নেই।
কমলমুখী। তবে আমি আসি।
বিনোদবিহারী। না, এরকম স্ত্রীলোক আমি কখনো দেখি নি। কেমন বুদ্ধি, কেমন বেশ আপনাকে আপনি যেন ধারণ করে রেখেছেন। জড়োসড়ো নির্বোধ কাঁচুমাচু ভাব কিচ্ছু নেই অথচ কেমন সলজ্জ সসম্ভ্রম ব্যবহার। আমার মতো একজন অপরিচিত পুরুষের প্রতি এতটা পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও নির্ভরের কথা বললেন অথচ সেটা কেমন স্বাভাবিক সরল শুনতে হল—কিছুমাত্র বাড়াবাড়ি মনে হল না। এই রকম স্ত্রীলোক দেখলে পুরুষগুলোকে নিতান্ত আনাড়ি জড়ভরত মনে হয়। এই দুটি-চারটি কথা কয়েই মনে হচ্ছে যেন ওঁর সঙ্গে আমার চিরকালের জানাশোনা আছে—যেন ওঁর কাজ করা, ওঁর সেবা করা আমার একটা পরম কর্তব্য। কিন্তু নিবারণবাবুর সঙ্গে রানীর আলাপ আছে শুনে আমার ভয় হচ্ছে পাছে আমার স্ত্রীর কথা সমস্ত শুনতে পান। ছি ছি, সে বড়ো লজ্জার বিষয় হবে। উনি হয়তো ঠিক আমার মনের ভাবটা বুঝতে পারবেন না, আমাকে কী মনে করবেন কে জানে। আমি আজই নিবারণবাবুর বাড়ি গিয়ে আমার স্ত্রীকে নিরে আসব।
কমলমুখী। আমার জন্যে আপনি আর কিছু ভাববেন না—এখন ইন্দুর এই গোলটা চুকে গেলেই বাঁচা যায়।
নিবারণ। তাই তো মা, আমাকে ভারি ভাবনা ধরিয়ে দিয়েছে। আমি এ দিকে শিবু ডাক্তারের সঙ্গে কথাবার্তা একরকম স্থির করে বসে আছি, এখন তাকেই বা কী বলি, ললিত চাটুজ্যেকেই বা কোথায় পাওয়া যায়, আর সে বিয়ে করতে রাজি হয় কি না তাই বা কে জানে।
কমলমুখী। সেজন্যে ভাববেন না কাকা। আমাদের ইন্দুকে চোখে দেখলে বিয়ে করতে নারাজ হবে এমন ছেলে কেউ জন্মায় নি।