Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


শোধবোধ- পঞ্চম দৃশ্য, ৩৫
শোধবোধ

শশধর। কেন সতীশ।

সতীশ। নিজের কোনো মূল্য থাকে তবে সেই মূল্য দিয়ে যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুই ভোগ করব। তা ছাড়া তুমি যে আমাকে তোমার সম্পত্তির অংশ দিতে চাও, মাসিমার সম্মতি নিয়েছ তো?

শশধর। না, সে তিনি — অর্থাৎ, বুঝেছ — সে এক রকম করে হবে। হঠাৎ তিনি রাজি না হতে পারেন, কিন্তু — যদিই বা —

সতীশ। তুমি তাঁকে বলেছ?

শশধর। হাঁ, বলেছি বৈকি। বিলক্ষণ! তাঁকে না বলেই কি আর —

সতীশ। তিনি রাজি হয়েছেন?

শশধর। তাকে ঠিক রাজি বলা যায় না বটে, কিন্তু ভালো করে বুঝিয়ে-ধৈর্য ধরে থাকলেই —

সতীশ। বৃথা চেষ্টা, মেসোমশায়। তাঁর নারাজিতে তোমার সম্পত্তি আমি নিতে চাই নে। তুমি তাঁকে বোলো, আজ পর্যন্ত তিনি যে অন্ন খাইয়েছেন তা উদগার না করে আমি বাঁচব না। তাঁর সমস্ত ঋণ সুদসুদ্ধ শোধ করে তবে আমি হাঁফ ছাড়ব।

শশধর। সে কিছুই দরকার নেই, সতীশ। তোমাকে বরঞ্চ কিছু নগদ টাকা গোপনে —

সতীশ। না মেসোমশায়, আর ঋণ বাড়াব না। মাসিমাকে বোলো, আজই এখনই তাঁর কাছে হিসাব চুকিয়ে তবে জলগ্রহণ করব।

[প্রস্থান


পঞ্চম দৃশ্য
বাগান
সুকুমারীর প্রবেশ

সুকুমারী। দেখো দেখি, এখন সতীশ কেমন পরিশ্রম করে কাজকর্ম করছে। দেখো, অতবড়ো সাহেব-বাবু আজকাল পুরোনো কালো আলপাকার চাপকানের উপরে কোঁচানো চাদর ঝুলিয়ে কেমন নিয়মিত আপিসে যায়!

শশধর। বড়োসাহেব সতীশের খুব প্রশংসা করেন।

সুকুমারী। ভালোই তো, যা মাইনে পাবে তাতেই বেশ চলে যাবে। তার উপরে যদি তোমার জমিদারিটা তাকে দিয়ে ব’স, তবে একদিনে সে টাই-কলার-জুতা-ছড়ি কিনেই সেটা নিলামে চড়িয়ে দেবে। আমার পরামর্শ নিয়ে যদি চলতে তবে সতীশ এতদিনে মানুষের মতো হত।

শশধর। বিধাতা আমাদের বুদ্ধি দেন নি, কিন্তু স্ত্রী দিয়েছেন; আর তোমাদের বুদ্ধি দিয়েছেন, তেমনি সঙ্গে সঙ্গে নির্বোধ স্বামীগুলাকেও তোমাদের হাতে সমর্পণ করেছেন — আমাদেরই জিত।

সুকুমারী। আচ্ছা, আচ্ছা, ঢের হয়েছে, ঠাট্টা করতে হবে না। কিন্তু সতীশের পিছনে এতদিন যে-টাকাটা ঢেলেছ সে যদি আজ থাকত, তবে —

শশধর। সতীশ তো বলেছে, কোনো-একদিন সে সমস্তই শোধ করে দেবে।