মন্দিরপ্রাঙ্গণ
গণেশ। এবারে মেলায় তেমন লোক হল না!
অক্রূর। এবারে আর লোক হবে কী করে? এ তো আর হিঁদুর রাজত্ব রইল না। এ যেন নবাবের রাজত্ব হয়ে উঠল। ঠাকরুনের বলিই বন্ধ হয়ে গেল, তো মেলায় লোক আসবে কী!
কানু। ভাই, রাজার তো এ বুদ্ধি ছিল না, বোধ হয় কিসে তাকে পেয়েছে।
অক্রূর। যদি পেয়ে থাকে তো কোন্ মুসলমানের ভূতে পেয়েছে, নইলে বলি উঠিয়ে দেবে কেন?
গণেশ। কিন্তু যাই বলো, এ রাজ্যের মঙ্গল হবে না।
কানু। পুরুত-ঠাকুর তো স্বয়ং বলে দিয়েছেন, তিন মাসের মধ্যে মড়কে দেশ উচ্ছন্ন যাবে।
হারু। তিন মাস কেন, যেরকম দেখছি তাতে তিন দিনের ভর সইবে না। এই দেখো-না কেন, আমাদের মোধো এই আড়াই বছর ধরে ব্যামোয় ভুগে ভুগে বরাবরই তো বেঁচে এসেছে, ঐ, যেমন বলি বন্ধ হল অমনি মারা গেল।
অক্রূর। না রে, সে তো আজ তিন মাস হল মরেছে।
হারু। নাহয় তিন মাসই হল, কিন্তু এই বছরেই তো মরেছে বটে।
ক্ষান্তমণি। ওগো, তা কেন, আমার ভাসুরপো, সে যে মরবে কে জানত। তিন দিনের জ্বর — ঐ, যেমনি কবিরাজের বড়িটি খাওয়া অমনি চোখ উল্টে গেল।
গণেশ। সেদিন মথুরহাটির গঞ্জে আগুন লাগল, একখানা চালা বাকি রইল না!
চিন্তামণি। অত কথায় কাজ কী! দেখো-না কেন, এ বছর ধান যেমন সস্তা হয়েছে এমন আর কোনোবার হয় নি। এ বছর চাষার কপালে কী আছে কে জানে!
হারু। ঐ রে, রাজা আসছে। সকালবেলাতেই আমাদের এমন রাজার মুখ দেখলুম, দিন কেমন যাবে কে জানে। চল্ এখান থেকে সরে পড়ি।
[ সকলের প্রস্থান
চাঁদপাল ও গোবিন্দমাণিক্যের প্রবেশ
চাঁদপাল। মহারাজ, সাবধানে থেকো। চারি দিকে
চক্ষুকর্ণ পেতে আছি, রাজ-ইষ্টানিষ্ট
কিছু না এড়ায় মোর কাছে। মহারাজ,
তব প্রাণহত্যা-তরে গুপ্ত আলোচনা
স্বকর্ণে শুনেছি।
গোবিন্দমাণিক্য। প্রাণহত্যা! কে করিবে?