Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


রাজা ও রানী - তৃতীয় অঙ্ক - প্রথম দৃশ্য, ৪০
রাজা ও রানী

ক্ষুদ্র সান্ত্বনার কথা বলো না ব্রাহ্মণ!

আমারে পশ্চাতে ফেলে চলে গেছে চোর,

আপনারে পেয়েছি কুড়ায়ে। আজি সখা,

আনন্দের দিন। এস আলিঙ্গনপাশে।

আলিঙ্গন করিয়া

বন্ধু, বন্ধু, মিথ্যা কথা, মিথ্যা এই ভান।

থেকে থেকে বজ্রশেল ছুটিছে, বিঁধিছে

মর্মে। এসো এসো, একবার অশ্রুজল

ফেলি বন্ধুর হৃদয়ে। মেঘ যাক কেটে।


তৃতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
কাশ্মীর
প্রাসাদসম্মুখে রাজপথ। দ্বারে শংকর

শংকর। এতটুকু ছিল, আমার কোলে খেলা করত। যখন কেবল চারটি দাঁত উঠেছে তখন সে আমাকে ‘সংকল দাদা' বলত। এখন বড়ো হয়ে উঠেছে, এখন সংকল দাদার কোলে আর ধরে না, এখন সিংহাসন চাই। স্বর্গীয় মহারাজ মরবার সময় তোদের দুটি ভাইবোনকে আমার কোলে দিয়ে গিয়েছিল। বোনটি তো দুদিন বাদে স্বামীর কোলে গেল। মনে করেছিলুম কুমারসেনকে আমার কোল থেকে একেবারে সিংহাসনে উঠিয়ে দেব। কিন্তু খুড়ো-মহারাজ আর সিংহাসন থেকে নাবেন না। শুভলগ্ন কতবার হল, কিন্তু আজ কাল করে আর সময় হল না। কত ওজর কত আপত্তি! আরে ভাই সংকলের কোল এক, আর সিংহাসন এক। বুড়ো হয়ে গেলুম — তোকে কি আর রাজাসনে দেখে যেতে পারব!

 

দুইজন সৈনিকের প্রবেশ

 

প্রথম সৈনিক। আমাদের যুবরাজ কবে রাজা হবে রে ভাই? সেদিন আমি তোদের সকলকে মহুয়া খাওয়াব।

দ্বিতীয় সৈনিক। আরে, তুই তো মহুয়া খাওয়াবি — আমি জান্‌ দেব, আমি লড়াই করে করে বেড়াব, আমি পাঁচটা গাঁ লুট করে আনব। আমি আমার মহাজন বেটার মাথা ভেঙে দেব। বলিস তো, আমি খুশি হয়ে যুবরাজের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অম্‌নি মরে পড়ে যাব।

প্রথম সৈনিক। তা কি আমি পারি নে। মরবার কথা কী বলিস। আমার যদি সওয়া-শো বরষ পরমায়ু থাকে আমি যুবরাজের জন্যে রোজ নিয়মিত দু-সন্ধে দুবার করে মরতে পারি। তা ছাড়া উপরি আছে।