কখন গেছে বলো তো।
বাউল। অনেকক্ষণ — রাতের প্রথম প্রহরেই।
এখন বোধ হয় তিন প্রহর পেরিয়ে গেছে। কেমন একটা ঠাণ্ডা হাওয়া দিয়েছে — গা সির্ সির্ করছে।
দেখ্ ভাই, স্বপ্ন দেখেছি যেন তিন জন মেয়েমানুষ চুল এলিয়ে দিয়ে —
তোর স্বপ্নের কথা রেখে দে। ভালো লাগছে না।
সব লক্ষণগুলো কেমন খারাপ ঠেকছে।
পেঁচাটা ডাকছিল, এতক্ষণ কিছু মনে হয় নি — কিন্তু —
মাঠের ওপারে কুকুরটা কী রকম বিশ্রী সুরে চেঁচাচ্ছে শুনছিস!
ঠিক যেন তার পিঠের উপর ডাইনি সওয়ার হয়ে তাকে চাবকাচ্ছে।
যদি ফেরবার হত চন্দ্রহাস এতক্ষণে ফিরত।
রাতটা কেটে গেলে বাঁচা যায়।
শোন্ রে ভাই, ঐ মেয়েমানুষের কান্না!
ওরা তো কাঁদছেই — কেবল কাঁদছেই, অথচ কাউকে ধরে রাখতে পারছে না।
নাঃ, আর পারা যায় না — চুপ করে বসে থাকলেই যত কুলক্ষণ দেখা যায়।
চল্ আমরাও যাই — পথ চললেই ভয় থাকে না।
পথ দেখাবে কে।
ঐ যে বাউল আছে।
কী হে, তুমি পথ দেখাতে পারো?
বাউল। পারি।
বিশ্বাস করতে সাহস হয় না। তুমি চোখে না দেখে পথ বের কর শুধু গান গেয়ে?
তুমি চন্দ্রহাসকে কী রাস্তা দেখিয়ে দিলে। যদি সে ফিরে আসে তবে তোমাকে বিশ্বাস করব।
ফিরে যদি না আসে তা হলে কিন্তু —
চন্দ্রহাসকে যে আমরা এত ভালোবাসতুম তা জানতুম না।
এতদিন ওকে নিয়ে আমরা যা-খুশি তাই করেছি।
যখন খেলি তখন খেলাটাই হয় বড়ো, যার সঙ্গে খেলি তাকে নজর করি নে।
এবার যদি সে ফেরে, তাকে মুহূর্তের জন্যে অনাদর করব না।
আমার মনে হচ্ছে আমরা কেবলই তাকে দুঃখ দিয়েছি।
তার ভালোবাসা সব দুঃখকে ছাড়িয়ে উঠেছিল।
সে যে কী সুন্দর ছিল যখন তাকে চোখে দেখলুম তখন সেটা চোখে পড়ে নি।