Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


প্রায়শ্চিত্ত - প্রথম অঙ্ক - ৫, ১২
প্রায়শ্চিত্ত
একেবারে মাথাভরা চুল ছিল। সেদিন কি আর এত রাস্তা পেরিয়ে তোদের খোশামোদ করতে আসতুম। সেদিন একটা চুল পেকেছে কি, অমনি পাঁচটা রূপসী তোলবার জন্যে উমেদার হত। মনের আগ্রহে কাঁচাচুল সুদ্ধ উজাড় করে দেবার জো করত।

সুরমা। দাদামশায়, টাকের আলোচনা পরে হবে, এখন বিভার একটা যা হয় উপায় করে দাও।

বসন্ত রায়। সেও কি আমাকে আবার বলতে হবে না কি? এতক্ষণ কী করছিলুম? এই যে বুড়োটা রয়েছে এ কি কোনো কাজেই লাগে না মনে করছ?

গান

মলিন মুখে ফুটুক হাসি, জুড়াক দু-নয়ন।

মলিন বসন ছাড়ো সখী, পরো আভরণ।

অশ্রুধোওয়া কাজলরেখা

আবার চোখে দিক না দেখা,

শিথিল বেণী তুলুক বেঁধে কুসুমবন্ধন।

বিভা। দাদামশায়, সত্যি তুমি বাবার কাছে কিছু বলেছ?

বসন্ত রায়। একটা কিছু যে বলেছি তার সাক্ষী আমি থাকতে থাকতেই হাজির হবে।

বিভা। কেন এমন কাজ করতে গেলে?

বসন্ত রায়। খুব করেছি বেশ করেছি।

বিভা। না দাদামশায়, আমি ভারি রাগ করেছি।

বসন্ত রায়। এই বুঝি বকশিশ! যার জন্যে চুরি করি সেই বলে চোর!

বিভা। না, সত্যি বলছি, কেন তুমি বাবাকে অনুরোধ করতে গেলে?

বসন্ত রায়। দিদি, রাজার ঘরে যখন জন্মেছিস তখন অভিমান করে ফল নেই — এরা সব পাথর।

বিভা। আমার নিজের জন্যে অভিমান করি বুঝি! তিনি যে মানী, তাঁর অপমান কেন হবে?

বসন্ত রায়। আচ্ছা বেশ, সে আমার সঙ্গে তার বোঝাপড়া হবে। ওরে তুই এখন-

    গান

পিলু বারোয়াঁ

মান অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে

এগিয়ে নিয়ে আয়-

তারে এগিয়ে নিয়ে আয়।

চোখের জলে মিশিয়ে হাসি

ঢেলে দে তার পায়-

ওরে ঢেলে দে তার পায়।

আসছে পথে ছায়া পড়ে,

আকাশ এল আঁধার করে,

শুষ্ক কুসুম পড়ছে ঝরে