ভয় হচ্ছে আমরাও চৌপদী লিখতে বসে যাব — বড়ো দেরি নেই।
আর পাড়ার লোক আমাদের ঘিরে বসবে।
আর এমনি তাদের ভয়ানক উপকার হতে থাকবে যে, তারা এক পা নড়বে না।
আমরা রাত্রিবেলাকার পাথরের মতো ঠাণ্ডা হয়ে বসে থাকব।
আর তারা আমাদের চার দিকে কুয়াশার মতো ঘন হয়ে জমবে।
ও ভাই, আমাদের সর্দার এ-সব কথা শুনলে বলবে কী।
ওরে আমার ক্রমে বিশ্বাস হচ্ছে সর্দারই আমাদের ঠকিয়েছে। সে আমাদের মিথ্যে ফাঁকি দিয়ে খাটিয়ে নেয়, নিজে সে কুঁড়ের সর্দার।
ফিরে চল্ রে। এবার সর্দারের সঙ্গে লড়ব।
বলব, আমরা চলব না — দুই পা কাঁধের উপর মুড়ে বসব। পা দুটো লক্ষ্মীছাড়া, পথে পথেই ঘুরে মরল।
হাত দুটোকে পিছনের দিকে বেঁধে রাখব।
পিছনের কোনো বালাই নেই রে, যত মুশকিল এই সামনেটাকে নিয়ে।
শরীরে যতগুলো অঙ্গ আছে তার মধ্যে পিঠটাই সত্যি কথা বলে। সে বলে চিত হয়ে পড়্, চিত হয়ে পড়্।
কাঁচা বয়সে বুকটা বুক ফুলিয়ে চলে কিন্তু পরিণামে সেই পিঠের উপরেই ভর — পড়তেই হয় চিত হয়ে।
গোড়াতেই যদি চিতপাত দিয়ে শুরু করা যেত তা হলে মাঝখানে উৎপাত থাকত না রে।
আমাদের গ্রামের ছায়ার নীচে দিয়ে সেই যে ইরা নদী বয়ে চলেছে তার কথা মনে পড়ছে ভাই।
সেদিন মনে হয়েছিল, সে বলছে, চল্, চল্, চল্ — আজ মনে হচ্ছে ভুল শুনেছিলুম, সে বলছে, ছল, ছল, ছল। সংসারটা সবই ছল রে!
সে কথা আমাদের পণ্ডিত গোড়াতেই বলেছিল।
এবারে ফিরে গিয়েই একেবারে সোজা সেই পণ্ডিতের চণ্ডীমণ্ডপে।
পুঁথি ছাড়া আর এক পা চলা নয়।
কী ভুলটাই করেছিলুম। ভেবেছিলুম চলাটাই বাহাদুরি। কিন্তু না-চলাই যে গ্রহ নক্ষত্র জল হাওয়া সমস্তর উলটো। সেটাই তো তেজের কথা হল।
ওরে বীর, কোমর বাঁধ্ রে — আমরা চলব না।
ওরে পালোয়ান, তাল ঠুকে বসে পড়্, আমরা চলব না।
চলচ্চিত্তং চলদ্বিত্তং — আমাদের চিত্তেও কাজ নেই, বিত্তেও কাজ নেই ; আমরা চলব না।
চলজ্জীবনযৌবনং — আমাদের জীবনও থাক্, যৌবনও থাক্, আমরা চলব না।
যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছি ফিরে চল্।
না রে, সেখানে ফিরতে হলেও চলতে হবে।
তবে?
তবে আর কী। যেখানে এসে পড়েছি এইখানেই বসে পড়ি।
মনে করি এইখানেই বরাবর বসে আছি।