রসিকবাবু, ঐ - যে সেদিন আপনি যাঁর নাম নৃপবালা বললেন তিনি — তিনি — তাঁর সম্বন্ধে বিস্তারিত করে কিছু বলুন। সেদিন চকিতের মধ্যে তাঁর মুখে এমন একটি স্নিগ্ধভাব দেখেছি, তাঁর সম্বন্ধে কৌতূহল কিছুতেই থামাতে পারছি নে।
রসিক। বিস্তারিত করে বললে কৌতূহল আরো বেড়ে যাবে। এরকম কৌতূহল ‘হবিষা কৃষ্ণবর্ত্মেব ভূয় এবাভিবর্ধতে'। আমি তো তাঁকে এতকাল ধরে জেনে আসছি, কিন্তু সেই কোমল হৃদয়ের স্নিগ্ধ মধুর ভাবটি আমার কাছে ‘ক্ষণে ক্ষণে তন্নবতামুপৈতি'।
শ্রীশ। আচ্ছা, তিনি — আমি সেই নৃপবালার কথা জিজ্ঞাসা করছি —
রসিক। সে আমি বেশ বুঝতেই পারছি।
শ্রীশ। তা, তিনি — কী আর প্রশ্ন করব। তাঁর সম্বন্ধে যা হয় কিছু বলুন না — কাল কী বললেন, আজ সকালে কী করলেন, যত সামান্য হোক আপনি বলুন — আমি শুনি।
রসিক। ( শ্রীশের হাত ধরিয়া ) বড়ো খুশি হলুম শ্রীশবাবু, আপনি যথার্থ ভাবুক বটেন — আপনি তাঁকে কেবল চকিতের মধ্যে দেখে এটুকু কী করে ধরতে পারলেন যে তাঁর সম্বন্ধে তুচ্ছ কিছুই নেই। তিনি যদি বলেন ‘রসিকদা, ঐ কেরোসিনের বাতিটা একটুখানি উস্কে দাও' তো আমার মনে হয় যেন একটা নতুন কথা শুনলেম আদিকবির প্রথম অনুষ্টুপ ছন্দের মতো। কী বলব শ্রীশবাবু, আপনি শুনলে হয়তো হাসবেন, সেদিন ঘরে ঢুকে দেখি নৃপবালা ছুঁচের মুখে সুতো পরাচ্ছেন, কোলের উপর বালিশের ওয়াড় পড়ে রয়েছে — আমার মনে হল এক আশ্চর্য দৃশ্য। কতবার কত দর্জির দোকানের সামনে দিয়ে গেছি, কখনো মুখ তুলে দেখি নি, কিন্তু —
শ্রীশ। আচ্ছা রসিকবাবু, তিনি নিজের হাতে ঘরের সমস্ত কাজ করেন?
শৈলবালার প্রবেশ
শৈলবালা। রসিকদার সঙ্গে কী পরামর্শ করছেন।
রসিক। কিছুই না, নিতান্ত সামান্য কথা নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে, যত দূর তুচ্ছ হতে পারে।
চন্দ্র। সভা অধিবেশনের সময় হয়েছে আর বিলম্ব করা উচিত হয় না। পূর্ণবাবু, কৃষিবিদ্যালয় সম্বন্ধে আজ তুমি যে প্রস্তাব উত্থাপন করবে বলেছিলে সেটা আরম্ভ করো।
পূর্ণ। ( দণ্ডায়মান হইয়া ঘড়ির চেন নাড়িতে নাড়িতে ) আজ — আজ — ( কাশি )
রসিক। ( পার্শ্বে বসিয়া মৃদুস্বরে ) আজ এই সভা —
পূর্ণ। আজ এই সভা —
রসিক। যে নূতন সৌন্দর্য এবং গৌরব লাভ করিয়াছে —
পূর্ণ। যে নূতন সৌন্দর্য এবং গৌরব লাভ করিয়াছে —
রসিক। প্রথমে তাহারই জন্য অভিনন্দন প্রকাশ না করিয়া থাকিতে পারিতেছি না।
পূর্ণ। প্রথমে তাহারই জন্য অভিনন্দন প্রকাশ না করিয়া থাকিতে পারিতেছি না।
রসিক। ( মৃদুস্বরে ) বলে যান পূর্ণবাবু।
পূর্ণ। তাহারই জন্য অভিনন্দন প্রকাশ না করিয়া থাকিতে পারিতেছি না।
রসিক। ভয় কী পূর্ণবাবু, বলে যান।