তোমার পাঁচ টাকা বৈ পাওয়া নয়, কিন্তু তুমি পঞ্চান্ন টাকার গাল পেড়ে নিয়েছ বাপু— এই নাও তোমার টাকা।
ওহে বাপু, তোমার হোটেলের বিল এই শুধে দিচ্ছি, যদি কখনো অসময়ে তোমাদের শরণাগত হতে হয় তা হলে স্মরণ রেখো।
তোমার তিন মাসের বাড়িভাড়া পাওনা? এক মাসের টাকাটা আজ দিচ্ছি, বাকি পরে নিয়ো। তুমি তো ভাই, তোমার গালমন্দ আমাকে ষোলো-আনাই চুকিয়ে দিয়েছ, তাতে বোধ করি তোমার মনটা কতকটা খোলসা হয়েছে, এখন আশীর্বাদ করে বাড়ি চলে যাও।
ওহে বাপু, তোমার গহনা ফিরিয়ে দেওয়া সহজ নয়। যদি আমার স্ত্রী থাকতেন আর তোমার গহনা তাঁকে দিতুম তা হলেও ফিরিয়ে আনা শক্ত হত; আর যখন তিনি বর্তমান নেই এবং তোমার গহনা তাঁকে দিই নি, তখন ফিরিয়ে আনা আরো কত কঠিন তা একটুখানি ভেবে দেখলে তুমিও হয়তো বুঝতে পারবে। তবু যদি পীড়াপীড়ি কর তা হলে কাজেই তোমার হরিবাবুর ওখানে আমাকে যেতে হবে, কিন্তু খাবারটা আসে কি না আর-একটু না দেখে যেতে পারছি নে।— উঃ! আর তো পারি নে। চন্দ্র, ওহে চন্দ্র! এখানে উদয়ের তো কোনো সম্পর্ক নেই, এখন তুমি সুদ্ধ অস্ত গেলে আমি যে অন্ধকার দেখি। চন্দ্র! ওহে চন্দ্রকান্ত! এই-যে এসেছ। চন্দ্র, তুমি তো তোমার বাবুকে চেন, সত্য করে বলো দেখি আজ কাল এবং পরশুর মধ্যে তিনি কি হোটেল থেকে ফিরবেন।
বোধ হয় ফিরবেন না? এতক্ষণ পরে তোমার এই কথাটি আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস হচ্ছে। যা হোক, বড্ড খিদে পেয়েছে, এখন আর গাল দেবার সময় নেই, এই আধুলিটি নিয়ে যদি চট করে কিছু খাবার কিনে আন তা হলে প্রাণ রক্ষে হয়।
লোকটা নবাবি করে বেড়ায় অথচ কাজকর্ম কিছু নেই, আমরা ভাবতুম চালায় কী করে! এখন ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। কিন্তু, প্রত্যহ এতগুলি গাল হজম ক'রে, এতগুলি বিল ঠেকিয়ে, এতগুলো লোক খেদিয়ে রাখা তো কম কাণ্ড নয়। এতে মজুরি পোষায় না, এর চেয়ে ঘানি ঠেলেও সুখ আছে।
কী হে! শুধু মুড়ি নিয়ে এলে? আর কিছু পাওয়া গেল না? পয়সা কিছু ফিরেছে? না? আচ্ছা, তবে দাও মুড়িই দাও।
আহার
ওহে চন্দ্র, কী বলব, ক্ষুধার চোটে এই বাসি মুড়ি যেন সুধা ব'লে বোধ হচ্ছে। অনেক নিমন্ত্রণ খেয়েছি, কিন্তু এমন সুখ পাই নি। চন্দ্র, তুমিই সুধাকর বটে, কিন্তু আজকে কলঙ্কের ভাগটাই কিছু বেশি দেখা গেল। ডাবও একটা এনেছ দেখছি, এর জন্যেও স্বতন্ত্র কিছু দিতে হবে নাকি?
হবে না? শরীরে দয়ামায়া কিছু আছে বোধ হচ্ছে, এখন যদি একটি গাড়ি ডেকে দাও তো আস্তে আস্তে বিদায় হই।
গাড়ি এখানে পাওয়া যায় না? তবে তো বড়ো বিপদে ফেললে। আমি এখন না খেয়ে কাহিল শরীরে দেড় ক্রোশ রাস্তা হাঁটতে পারব না; যখন সম্মুখে আহারের আশা ছিল তখন পেরেছিলুম।— কী করব! বেরিয়ে পড়া যাক।
কী সর্বনাশ! এই সময়ে আবার হরিবাবুর ওখানে যেতে হবে? চন্দ্র, তুমি আজ আমার বিস্তর উপকার করেছ, এখন আর কিছু করতে হবে না, এই ভদ্রলোকের ছেলেটিকে বুঝিয়ে দাও আমি উদয়বাবু নই, আমি আহিরীটোলার অক্ষয়বাবু।
ও তোমার কথা বিশ্বাস করবে না? সেজন্যে ওকে আমি বেশি দোষ দিতে পারি নে, বোধ হয় তোমাকে ও অনেক দিন থেকে চেনে। যা হোক, আর ঝগড়া করবার সামর্থ্য নেই, আস্তে আস্তে হরিবাবুর ওখানেই যাওয়া যাক। বাপু, যেরকম অবস্থা দেখছ পথে যদি একটা কিছু ঘটে দাহ করবার ব্যয়টা তোমার স্কন্ধে পড়বে—আগে থাকতে বলে রাখলুম।
চন্দ্র, তুমি আবার হাত বাড়াও কেন হে! তোমাদের কল্যাণে যেরকম সস্তায় আজ নেমন্তন্ন খেয়ে গেলুম বহুকাল আমার আর