Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


চিরকুমার-সভা - প্রথম অঙ্ক - প্রথম দৃশ্য, ১৮
চিরকুমার-সভা
গান

যারে     মরণদশায় ধরে

সে যে শতবার করে মরে।

পোড়া পতঙ্গ যত পোড়ে তত

        আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

শৈলবালা। মুখুজ্জেমশায়, ও কাগজের গোলটা কিসের।

অক্ষয়। তোমাদের সেই সভ্য হবার আবেদনপত্র এবং প্রবেশিকার দশ টাকার নোট পকেটে ছিল, ধোবা বেটা কেচে এমনি পরিষ্কার করে দিয়েছে একটা অক্ষরও দেখতে পাচ্ছি নে। ও বেটা বোধ হয় স্ত্রীস্বাধীনতার ঘোরতর বিরোধী, তাই তোমার ঐ পত্রটা একেবারে আগাগোড়া সংশোধন করে দিয়েছে।

শৈলবালা। এই বুঝি!

অক্ষয়। চারটিতে মিলে স্মরণশক্তি জুড়ে বসে আছ, আর কিছু কি মনে রাখতে দিলে?—

গান

সকলি ভুলেছে ভোলা মন,

ভোলে নি ভোলে নি শুধু ওই চন্দ্রানন।

[ শৈল ও রসিকের প্রস্থান
পুরবালার প্রবেশ

অক্ষয়। স্বামীই স্ত্রীর একমাত্র তীর্থ। মান কি না।

পুরবালা। আমি কি পণ্ডিতমশায়ের কাছে শাস্ত্রের বিধান নিতে এসেছি। আমি মার সঙ্গে আজ কাশী চলেছি এই খবরটি দিয়ে গেলুম।

অক্ষয়। খবরটি সুখবর নয়— শোনবামাত্র তোমাকে শাল-দোশালা বকশিশ দিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে না।

পুরবালা। ইস, হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে? না? সহ্য করতে পারছ না?

অক্ষয়। আমি কেবল উপস্থিত বিচ্ছেদটার কথা ভাবছি নে। এখন তুমি দু দিন না রইলে, আরো কজন রয়েছেন, একরকম করে এই হতভাগ্যের চলে যাবে। কিন্তু এর পরে কী হবে। দেখো, ধর্মে-কর্মে স্বামীকে এগিয়ে যেয়ো না; স্বর্গে তুমি যখন ডবল প্রমোশন পেতে থাকবে আমি তখন পিছিয়ে থাকব— তোমাকে বিষ্ণুদূতে রথে চড়িয়ে নিয়ে যাবে, আর আমাকে যমদূতে কানে ধরে হাঁটিয়ে দৌড় করাবে।

গান

স্বর্গে তোমায় নিয়ে যাবে উড়িয়ে,

পিছে পিছে আমি চলব খুঁড়িয়ে,

ইচ্ছা হবে টিকির ডগা ধরে

    বিষ্ণুদূতের মাথাটা দিই গুঁড়িয়ে।