“এলা, ওর মতো জন্তুদের সাহস নেই, আছে দুর্গন্ধ, তাই কেউ ঘাঁটাতে চায় না। কিন্তু আমাকে ও সর্বান্তঃকরণে ভয় করে, আমি ভয়ংকর বলে যে তা নয়, আমি ওর থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রজাতীয় বলে।”
“দেখো অন্তু, জীবনে অনেক দুঃখবিপদের সম্ভাবনা আমি ভেবেছি, তার জন্যে প্রস্তুতও আছি কিন্তু একদিন কোনো দুর্যোগে যেন ওর কবলে না পড়ি, তার চেয়ে মৃত্যু ভালো।” অন্তুর হাত চেপে ধরলে, যেন এখনই উদ্ধার করবার সময় হয়েছে।
জানো অন্তু, হিংস্র জন্তুর হাতে অপমৃত্যুর কল্পনা কখনো কখনো মনে আসে, তখন দেবতাকে জানাই, বাঘে খায় ভালুকে খায় সেও ভালো, কিন্তু আমাকে পাঁকের মধ্যে টেনে নিয়ে কুমিরে খাবে– এ যেন কিছুতে না ঘটে।”
“আমি কি বাঘভালুকের কোঠায় না কি?”
“না গো, তুমি আমার নরসিংহ, তোমার হাতে মরণেই আমার মুক্তি। ওই শোনো পায়ের শব্দ। উপরে উঠে এল বলে।”
অতীন্দ্র ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে জোর গলায় বললে, “বটু, এখানে নয়, চলো নীচে বসবার ঘরে।”
বটু বললে, “এলাদি–”
“এলাদি এখন কাপড় ছাড়তে গেলেন, চলো নীচে।”
“কাপড় ছাড়তে? এত দেরিতে? সাড়ে আটটা–”
“হাঁ হাঁ, আমি দেরি করিয়ে দিয়েছি।”
“কেবল একটা কথা। পাঁচ মিনিট।”
“তিনি স্নানের ঘরে গেছেন। বলে গেছেন, এ ঘরে কেউ আসে তাঁর ইচ্ছে নয়।”
“আপনি?”
“আমি ছাড়া।”
বটু খুব স্পষ্ট একটা ঠোঁটবাঁকা হাসি হাসলে। বললে, “আমরা চিরকাল রইলুম ব্যাকরণের সাধারণ নিয়মে, আর আপনি দুদিন এসেই উঠে পড়েছেন, আর্ষপ্রয়োগে। এক্সেপশন পিছল পথের আশ্রয়, বেশিকাল সয় না বলে রেখে দিলুম।” বলে তর তর করে নেবে চলে গেল।
ছোটো একটা করাত হাতে দোলাতে দোলাতে অখিল এসে বললে, “চিঠি।” ওর অসমাপ্ত সৃষ্টিকাজের মাঝখান থেকে উঠে এসেছে।
“তোমার দিদিমণির?”
“না আপনার। আপনারই হাতে দিতে বললে।”
“কে?”
“চিনি নে।” বলেই চিঠিখানা দিয়ে চলে গেল। চিঠির কাগজের লাল রঙ দেখেই অতীন বুঝলে, এটা ডেন্জর সিগ্ন্যাল। গোপন ভাষায় লেখা চিঠি পড়ে দেখলে—“এলার বাড়িতে আর নয়, তাকে কিছু না জানিয়ে এই মুহূর্তে চলে এসো।”
কর্মের যে শাসন স্বীকার করে নিয়েছে তাকে অসম্মান করাকে অতীন আত্মসম্মানের বিরুদ্ধ বলেই জানে। চিঠিখানা যথারীতি কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেললে। মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে দাঁড়াল রুদ্ধ নাবার ঘরের বাইরে। পরক্ষণে দ্রুতবেগে গেল বেরিয়ে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে একবার দোতলার দিকে তাকালে।
জানলা খোলা, বাইরে থেকে দেখা যায় আরামকেদারার একটা অংশ, আর তার সঙ্গে সংলগ্ন লালেতে হলদেতে ডোরা-কাটা চৌকো