এলা খুশিতে চমকে উঠে বললে, “অসভ্য, জানান না দিয়ে এ ঘরে আসতে সাহস কর।”
এলার পায়ের কাছে ধপ করে মেঝের উপর বসে অতীন বললে, “জীবনটা অতি ছোটো, কায়দাকানুন অতি দীর্ঘ, নিয়ম বাঁচিয়ে চলবার উপযুক্ত পরমায়ু ছিল সনাতন যুগে মান্ধাতার। কলিকালে তার টানাটানি পড়েছে।”
“আমার কাপড় ছাড়া হয় নি এখনও।”
“ভালোই। তা হলে আমার সঙ্গে মিশ খাবে। তুমি থাকবে রথে, আমি থাকব পদাতিক হয়ে– এ-রকম দ্বন্দ্ব মনুর নিয়মে অধর্ম। এককালে আমি ছিলুম নিখুঁত ভদ্রলোক, খোলসটা তুমিই দিয়েছ ঘুচিয়ে। বর্তমান বেশভূষাটা দেখছ কী রকম?”
“অভিধানে ওকে বেশভূষা বলে না।”
“কী বলে তবে?”
“শব্দ পাচ্ছি নে খুঁজে। বোধ হয় ভাষায় নেই। জামার সামনেটাতেই ঐ-যে বাঁকাচোরা ছেঁড়ার দাগ, ও কি তোমার স্বকৃত সেলাইয়ের লম্বা বিজ্ঞাপন?”
“ভাগ্যের আঘাত দারুণ হলেও বুক পেতেই নিয়ে থাকি– ওটা তারই পরিচয়। এ জামা দরজিকে দিতে সাহস হয় না, তার তো আত্মসম্মানবোধ আছে।”
“আমাকে দিলে না কেন?”
“নব যুগের সংস্কারভার নিয়েছ, তার উপরে পুরোনো জামার সংস্কার?”
“ওটাকে সহ্য করবার এমনই কী দরকার ছিল?”
“যে দরকারে ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে সহ্য করে।”
“তার অর্থ?”
“তার অর্থ, একটির বেশি নেই বলে।”
“কী বল তুমি অন্তু! বিশ্বসংসারে তোমার ওই একটি বৈ জামা আর নেই?”
“বাড়িয়ে বলা অন্যায়, তাই কমিয়ে বললুম। পূর্ব আশ্রমে শ্রীযুক্ত অতীন্দ্রবাবুর জামা ছিল বহুসংখ্যক ও বহুবিধ। এমন সময়ে দেশে এল বন্যা। তুমি বক্তৃতায় বললে, যে অশ্রুপ্লাবিত দুর্দিনে, (মনে আছে অশ্রুপ্লাবিত বিশেষণটা?) বহু নরনারীর লজ্জা রক্ষার মতো কাপড়