“তোদের জামাইবাবু একদিন আমাকে ডাকত ‘রঙমহলের রঙ্গিনী’। দশ বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে, সেই রঙ তো এখনো ফিকে হয় নি, কিন্তু সেই রঙমহল?”
“যাবে কোথায়, আছে তোমার মহল। কাল তুমি সারারাত ঘুমোও নি, একটু ঘুমোও তো, পায়ে হাত বুলিয়ে দিই।”
“রোশনি, আজ তো পূর্ণিমার কাছাকাছি। এমন কত জ্যোৎস্নারাত্রে ঘুমোই নি। দুজনে বেড়িয়েছি বাগানে। সেই জাগা আর এই জাগা। আজ তো ঘুমোতে পারলে বাঁচি, কিন্তু পোড়া ঘুম আসতে চায় না যে।”
“একটু চুপ করে থাকো দেখি, ঘুম আপনি আসবে।”
“আচ্ছা, ওরা কি বাগানে বেড়ায় জ্যোৎস্নারাত্রে।”
“ভোরবেলাকার চালানের জন্য ফুল কাটতে দেখেছি। বেড়াবে কখন, সময় কোথায়।”
“মালীগুলো আজকাল খুব ঘুমোচ্ছে। তা হলে মালীদের বুঝি জাগায় না ইচ্ছে করেই?”
“তুমি নেই এখন ওদের গায়ে হাত দেয় কার সাধ্যি।”
“ঐ না শুনলেম গাড়ির শব্দ?”
“হাঁ, বাবুর গাড়ি এল।”
“হাত-আয়নাটা এগিয়ে দে। বড়ো গোলাপটা নিয়ে আয় ফুলদানি থেকে। সেফটিপিনের বাক্সটা কোথায় দেখি। আজ আমার মুখ বড়ো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। যা তুই ঘর থেকে।”
“যাচ্ছি, কিন্তু দুধ বার্লি পড়ে আছে, খেয়ে নাও লক্ষ্মীটি।”
“থাক্ পড়ে, খাব না।”
“দু দাগ ওষুধ তোমার আজ খাওয়া হয় নি।”
“তোর বকতে হবে না, তুই যা বলছি, ঐ জানলাটা খুলে দিয়ে যা।”
আয়া চলে গেল।
ঢং ঢং করে তিনটে বাজল। আরক্ত হয়ে এসেছে রোদ্দুরের রঙ, ছায়া হেলে পড়েছে পুব দিকে, বাতাস এল দক্ষিণ থেকে, ঝিলের জল উঠল টল টল করে। মালীরা লেগেছে কাজে, নীরজা দূর থেকে যতটা পারে তাই দেখে।
দ্রুতপদে আদিত্য ছুটে এল ঘরে। হাত জোড়া বাসন্তী রঙের দেশী ল্যাবার্নম ফুলের মঞ্জরীতে। তাই দিয়ে ঢেকে দিল নীরজার পায়ের কাছটা। বিছানায় বসেই তার হাত চেপে ধরে বললে, “আজ কতক্ষণ তোমাকে দেখি নি নীরু।” শুনে নীরজা আর থাকতে পারলে না, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আদিত্য খাটের থেকে নেমে মেজের উপর হাঁটু গেড়ে নীরজার গলা জড়িয়ে ধরলে, তার ভিজে গালে চুমো খেয়ে বললে, “মনে মনে তুমি নিশ্চয় জান আমার দোষ ছিল না।”
“অত নিশ্চয় করে কী করে জানব বলো। আমার কি আর সেদিন আছে।”
“দিনের কথা হিসেব করে কী হবে। তুমি তো আমার সেই তুমিই আছ।”
“আজ যে আমার সকলতাতেই ভয় করে। জোর পাই নে যে মনে।”
“অল্প একটু ভয় করতে ভালো লাগে। না? খোঁটা দিয়ে আমাকে একটুখানি উসকিয়ে দিতে চাও। এ চাতুরী মেয়েদের স্বভাবসিদ্ধ।”
“আর ভুলে-যাওয়া বুঝি পুরুষদের স্বভাবসিদ্ধ নয়?”