নিমাই। হায় হায়, আমি এতদিন কী ভুলটাই করেছি। বাগবাজারের রাস্তায় রাস্তায় বৃথা ঘুরে বেড়িয়েছি, বাবা আমাকে উঠতে বসতে দু বেলা বাপান্ত করেছেন,কাদম্বিনী নামটা ছন্দের ভিতর পুরতে মাথা ভাঙাভাঙি করেছি—
কেমন করে চকোর বলে তখনি চিনিলে—
কিংবা
কেমন করে চাকর বলে তখনি চিনিলে
ইন্দুমতী। তবে, এখন ভ্রম সংশোধন করুন—এই নিন আপনার খাতা। আমি চললুম।
নিমাই। আপনারও বোধ হচ্ছে যেন একটা মি হয়েছিল—সেটাও অনুগ্রহ করে সংশোধন করে নেবেন— আপনার একটা সুবিধে আছে, আপনাকে আর সেই সঙ্গে ছন্দ বদলাতে হবে না।
নিবারণ। দেখো বাপু, শিবু আমার বাল্যকালের বন্ধু—আমার বড়ো ইচ্ছে তাঁর সঙ্গে আমার একটা পারিবারিক বন্ধন হয়। এখন তোমাদের ইচ্ছের উপরেই সমস্ত নির্ভর করছে।
নিমাই। আমার ইচ্ছের জন্যে আপনি কিছু ভাববেন না, আপনার আদেশ পেলেই আমি কৃতার্থ হই।
নিবারণ। (স্বগত) যা মনে করেছিলুম তাই। বুড়ো বাপ মাথা খোঁড়াখুঁড়ি করে যা করতে না পারলে, একবার ইন্দুকে দেখবামাত্র সমস্ত ঠিক হয়ে গেল। বুড়োরাই শাস্তর মেনে চলে—যুবোদের শাস্ত্রই এক আলাদা— তা বাপু, তোমার কথা শুনে বড়ো আনন্দ হল। তা হলে একবার আমার মেয়েকে তার মতটা জিজ্ঞাসা করে আসি। তোমরা শিক্ষিত লোক, বুঝতেই পার, বয়ঃপ্রাপ্ত মেয়ে, তার সম্মতি না নিয়ে তাকে বিবাহ দেওয়া যায় না।
নিমাই। তা অবশ্য।
নিবারণ। তা হলে আমি একবার আসি। চন্দ্রবাবুদের এই ঘরে ডেকে দিয়ে যাই।
শিবচরণ। তুই এখানে বসে রয়েছিস, আমি তোকে পৃথিবীসুদ্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছি।
নিমাই। কেন বাবা।
শিবচরণ। তোকে যে আজ তারা দেখতে আসবে।
নিমাই। কারা।
শিবচরণ। বাগবাজারের চৌধুরীরা।
নিমাই। কেন।
শিবচরণ। কেন! না-দেখে না-শুনে অমনি ফস করে বিয়ে হয়ে যাবে? তোর বুঝি আর সবুর সইছে না?