সতীশ। আচ্ছা বাঁশি, ঐ ক্ষিতীশের মধ্যে কী দেখতে পাও বলো তো।
বাঁশরি। বিধাতা ওকে যে পরীক্ষার কাগজটা দিয়েছিলেন, দেখতে পাই তার উত্তরটা। আর দেখি তারই মাঝখানে পরীক্ষকের একটা মস্ত কাটা দাগ।
সতীশ। এমন ফেল-করা জিনিস দিয়ে করবে কী।
বাঁশরি। ডান হাত ধরে ওকে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করে দেব।
সতীশ। তার পরে বাঁ হাত দিয়ে প্রাইজ দেবার প্ল্যান আছে নাকি।
বাঁশরি। দিলে পরের ছেলের প্রতি নিষ্ঠুরতা করা হবে।
সতীশ। ঘরের ছেলের প্রতিও। এ দিকে ও মহলের হাল খবরটা শুনেছ?
বাঁশরি। ও মহলের খবর এ মহলে এসে পৌঁছয় না। হাওয়া বইছে উলটো দিকে।
সতীশ। কথা ছিল সুষমার বিয়ে হবে মাস খানেক বাদে, সম্প্রতি স্থির হয়েছে আসছে হপ্তায়।
বাঁশরি। হঠাৎ দম এত দ্রুতবেগে চড়িয়ে দিলে যে?
সতীশ। ওদের হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠেছে দ্রুতবেগে, হঠাৎ দেখেছে তোমাকে রণরঙ্গিণী বেশে। তোমার তীর ছোটার আগেই ছুটে বেরিয়ে পড়তে চায়–এইরকম আন্দাজ।
বাঁশরি। আমার তীর! আধমরা প্রাণীকে আমি ছুঁই নে। বনমালী, মোটর ডাকো।
বয়স বাইশ কিন্তু দেখে মনে হয় ষোলো থেকে আঠারোর মধ্যে। তনু দেহ শ্যামবর্ণ, চোখের ভাব স্নিগ্ধ, মুখের ভাব মমতায় ভরা।
সতীশ। কী আশ্চর্য! ভোরের স্বপ্নে আজ তোমাকেই দেখেছি, শৈল। তুমিও আমাকে দেখেছ নিশ্চয়।
শৈল। না, দেখি নি তো।
সতীশ। আঃ, বানিয়ে বলো-না কেন। বড়ো নিষ্ঠুর তুমি। আমার দিনটা মধুর হয়ে উঠত তা হলে।
শৈল। তোমাদের ফরমাশে নিজেকে স্বপ্ন করে বানাতে হবে। আমরা যা, শুধু তাই নিয়ে তোমাদের মন খুশি হয় না কেন।
সতীশ। খুব হয়, এই-যে সাক্ষাৎ এসেছ এর চেয়ে আর কিসের দরকার।
শৈল। আমি এসেছি বাঁশরির কাছে।
সতীশ। ঐ দেখো, আবার একটা সত্য কথা। সদ্য বিছানা থেকে উঠেই দু-দুটো খাঁটি সত্য কথা সহ্য করি এত মনের জোর নেই। ধর্মরাজ মাপ করতেন তোমাকে যদি বলতে আমারই জন্য এসেছ।
শৈল। ব্যারিস্টার মানুষ, তুমি বড্ড লিটরল। বাঁশরির কাছে আসতে চেয়েছি বলে তোমার কাছে আসবার কথা মনে ছিল না এটা ধরে নিলে কেন।
সতীশ। খোঁটা দেবার জন্যে। বাঁশির সঙ্গে কথা আছে কিছু? আমাদের লগ্ন স্থির করবার পরামর্শ?
শৈল। না, কোনো কথা নেই। ওর জন্য বড়ো মন খারাপ হয়ে থাকে। মনের মধ্যে মরণবাণ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে অথচ কবুল করবার মেয়ে নয়। ওর ব্যথায় হাত বুলোতে গেলে ফোঁস করে ওঠে, সেটা যেন সাপের মাথার মণি। তাই সময় পেলে কাছে এসে