
যখন বিনয়ের বাসায় হারানবাবুর আবির্ভাব হইয়াছে সেই সময়েই অবিনাশ আনন্দময়ীর কাছে গিয়া খবর দিয়াছে যে, বিনয়ের সঙ্গে ললিতার বিবাহ স্থির হইয়া গেছে।
আনন্দময়ী কহিলেন, “এ কথা কখনোই সত্য নয়।”
অবিনাশ কহিল, “কেন সত্য নয়? বিনয়ের পক্ষে এ কি অসম্ভব?”
আনন্দময়ী কহিলেন, “সে আমি জানি নে, কিন্তু এত বড়ো কথাটা বিনয় কখনোই আমার কাছে লুকিয়ে রাখত না।”
অবিনাশ যে ব্রাহ্মসমাজের লোকের কাছেই এই সংবাদ শুনিয়াছে, এবং ইহা সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য তাহা সে বার বার করিয়া বলিল। বিনয়ের যে এইরূপ শোচনীয় পরিণাম ঘটিবেই অবিনাশ তাহা বহু পূর্বেই জানিত, এমন-কি, গোরাকে এ সম্বন্ধে সে সতর্ক করিয়া দিয়াছিল ইহাই আনন্দময়ীর নিকট ঘোষণা করিয়া সে মহা-আনন্দে নীচের তলায় মহিমের কাছে এই সংবাদ দিয়া গেল।
আজ বিনয় যখন আসিল তাহার মুখ দেখিয়াই আনন্দময়ী বুঝিলেন যে, তাহার অন্তঃকরণের মধ্যে বিশেষ একটা ক্ষোভ জন্মিয়াছে। তাহাকে আহার করাইয়া নিজের ঘরের মধ্যে ডাকিয়া আনিয়া বসাইলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিনয়, কী হয়েছে তোর বল্ তো।”
বিনয় কহিল, “মা, এই চিঠিখানা পড়ে দেখো।”
আনন্দময়ীর চিঠি পড়া হইলে বিনয় কহিল, “আজ সকালে পানুবাবু আমার বাসায় এসেছিলেন— তিনি আমাকে খুব ভর্ৎসনা করে গেলেন।”
আনন্দময়ী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন?”
বিনয় কহিল, “তিনি বলেন, আমার আচরণে তাঁদের সমাজে পরেশবাবুর মেয়েদের সম্বন্ধে নিন্দার কারণ ঘটেছে।”
আনন্দময়ী কহিলেন, “লোকে বলছে ললিতার সঙ্গে তোর বিবাহ স্থির হয়ে গেছে, এতে আমি তো নিন্দার কোনো বিষয় দেখছি নে।”
বিনয় কহিল, “বিবাহ হবার জো থাকলে নিন্দার কোনো বিষয় থাকত না। কিন্তু যেখানে তার কোনো সম্ভাবনা নেই সেখানে এরকম গুজব রটানো কত বড়ো অন্যায়! বিশেষত ললিতার সম্বন্ধে এরকম রটনা করা অত্যন্ত কাপুরুষতা।”
আনন্দময়ী কহিলেন, “তোর যদি কিছুমাত্র পৌরুষ থাকে বিনু, তা হলে এই কাপুরুষতার হাত থেকে তুই অনায়াসেই ললিতাকে রক্ষা করতে পারিস।”
বিনয় বিস্মিত হইয়া কহিল, “কেমন করে মা?”