আয়া যখন হলাকে ডাকবার জন্যে উঠল, নীরজা বললে, “থাক্ থাক্, আজ থাক্।”
কিছুক্ষণ পরে ওর খুড়তুতো দেওর রমেন এসে বললে, “বউদি, দাদা পাঠিয়ে দিলেন। আজ আপিসে কাজের ভিড়, হোটেলে খাবেন, দেরি হবে ফিরতে।”
নীরজা হেসে বললে, “খবর দেবার ছুতো করে একদৌড়ে ছুটে এসেছ ঠাকুরপো! কেন, আপিসের বেহারাটা মরেছে বুঝি?”
“তোমার কাছে আসতে তুমি ছাড়া অন্য ছুতোর দরকার কিসের বউদি। বেহারা বেটা কী বুঝবে এই দূত-পদের দরদ।”
“ওগো মিষ্টি ছড়াচ্ছ অস্থানে, এ ঘরে এসেছ কোন্ ভুলে। তোমার মালিনী আছেন আজ একাকিনী নেবুকুঞ্জবনে, দেখো গে যাও।”
“কুঞ্জবনের বনলক্ষ্মীকে দর্শনী দিই আগে, তার পরে যাব মালিনীর সন্ধানে।” এই বলে বুকের পকেট থেকে একখানা গল্পের বই বের করে নীরজার হাতে দিল।
নীরজা খুশি হয়ে বললে, “ ‘অশ্রু-শিকল’, এই বইটাই চাচ্ছিলুম। আশীর্বাদ করি, তোমার মালঞ্চের মালিনী চিরদিন বুকের কাছে বাঁধা থাক্ হাসির শিকলে। ঐ যাকে তুমি বল তোমার কল্পনার দোসর, তোমার স্বপ্নসঙ্গিনী! কি সোহাগ গো।”
রমেন হঠাৎ বললে, “আচ্ছা বউদি, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, ঠিক উত্তর দিয়ো।”
“কী কথা।”
“সরলার সঙ্গে আজ কি তোমার ঝগড়া হয়ে গেছে।”
“কেন বলো তো।”
“দেখলুম ঝিলের ধারে ঘাটে চুপ করে সে বসে আছে। মেয়েদের তো পুরুষদের মতো কাজ-পালানো উড়ো মন নয়। এমন বেকার দশা আমি সরলার কোনোদিন দেখি নি। জিজ্ঞাসা করলুম, ‘মন কোন্ দিকে।’ ও বললে, ‘যে দিকে তপ্ত হাওয়া শুকনো পাতা ওড়ায় সেই দিকে।’ আমি বললুম, ‘ওটা হল হেঁয়ালি। স্পষ্ট ভাষায় কথা কও।’ সে বললে, ‘সব কথারই ভাষা আছে?’ আবার দেখি হেঁয়ালি। তখন গানের বুলিটা মনে পড়ল ‘কাহার বচন দিয়েছে বেদন’।”
“হয়তো তোমার দাদার বচন।”
“হতেই পারে না। দাদা যে পুরুষমানুষ। সে তোমার ঐ মালীগুলোকে হুংকার দিতে পারে। কিন্তু ‘পুষ্পরাশাবিবাগ্নিঃ’ এও কি সম্ভব হয়।”
“আচ্ছা, বাজে কথা বকতে হবে না। একটা কাজের কথা বলি, আমার অনুরোধ রাখতেই হবে। দোহাই তোমার, সরলাকে তুমি বিয়ে করো। আইবুড়ো মেয়েকে উদ্ধার করলে মহাপুণ্য।”
“পুণ্যের লোভ রাখি নে, কিন্তু ঐ কন্যার লোভ রাখি, এ কথা বলছি তোমার কাছে হলফ করে।”
“তা হলে বাধাটা কোথায়। ওর কি মন নেই।”
“সে কথা জিজ্ঞাসাও করি নি। বলেইছি তো ও আমার কল্পনার দোসরই থাকবে সংসারের দোসর হবে না।”
হঠাৎ তীব্র আগ্রহের সঙ্গে নীরজা রমেনের হাত চেপে ধরে বললে, “কেন হবে না, হতেই হবে। মরবার আগে তোমাদের বিয়ে