রসিক। না, এমন ভাব নয় যে, ওঁকে বিবাহ করতে পারেন। সে হলে তো কোনো গোলই ছিল না!
বিপিন। তাই বুঝি অবলাকান্তবাবু কিছু–
রসিক। কিছু যেন চিন্তান্বিত।
বিপিন। শ্রীমতী নীরবালা বুঝি গান ভালোবাসেন?
রসিক। বাসেন বটে, আপনার পকেটের মধ্যেই তো তার সাক্ষী আছে।
বিপিন। (পকেট হইতে গানের খাতা বাহির করিয়া) এখানা নিয়ে আসা আমার অত্যন্ত অভদ্রতা হয়েছে–
রসিক। সে অভদ্রতা আপনি না করলে আমরা কেউ-না-কেউ করতেম।
বিপিন। আপনারা করলে তিনি মার্জনা করতেন, কিন্তু আমি– বাস্তবিক অন্যায় হয়েছে, কিন্তু এখন ফিরিয়ে দিলেও তো–
রসিক। মূল অন্যায়টা অন্যায়ই থেকে যায়।
বিপিন। অতএব–
রসিক। যাঁহাতক বাহান্ন তাঁহাতক তিপ্পান্ন। হরণে যে দোষটুকু হয়েছে রক্ষণে নাহয় তাতে আর-একটু যোগ হল।
বিপিন। খাতাটা সম্বন্ধে তিনি কি আপনাদের কাছে কিছু বলেছেন?
রসিক। বলেছেন অল্পই, কিন্তু না বলেছেন অনেকটা।
বিপিন। কিরকম?
রসিক। লজ্জায় অনেকখানি লাল হয়ে উঠলেন।
বিপিন। ছি ছি, সে লজ্জা আমারই।
রসিক। আপনার লজ্জা তিনি ভাগ করে নিলেন, যেমন অরুণের লজ্জায় উষা রক্তিম।
বিপিন। আমাকে আর পাগল করবেন না রসিকবাবু!
রসিক। দলে টানছি মশায়!
বিপিন। (খাতা পুনর্বার পকেটে পুরিয়া) ইংরাজিতে বলে দোষ করা মানবের ধর্ম, ক্ষমা করা দেবতার।
রসিক। আপনি তা হলে মানবধর্ম পালনটাই সাব্যস্ত করলেন!
বিপিন। দেবীর ধর্মে যা বলে তিনি তাই করবেন!
শ্রীশ। অবলাকান্তবাবুর সঙ্গে দেখা হল না।
বিপিন। তুমি রাতারাতিই তাঁকে সন্ন্যাসী করতে চাও নাকি?
শ্রীশ। যা হোক, অক্ষয়বাবুর কাছে বিদায় নিয়ে এলুম।
বিপিন। বটে বটে, তাঁকে বলে আসতে ভুলে গিয়েছিলেম– একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করে আসি গে।
রসিক। (জনান্তিকে) পুনর্বার কিছু সংগ্রহের চেষ্টায় আছেন বুঝি? মানবধর্মটা ক্রমেই আপনাকে চেপে ধরছে!
শ্রীশ। রসিকবাবু, আপনার কাছে আমার একটা পরামর্শ আছে।
রসিক। পরামর্শ দেবার উপযুক্ত বয়স হয়েছে, বুদ্ধি না হতেও পারে।