প্রিয়জনেন ন যত্র সমাগমঃ।
শ্রীশ। অস্যার্থঃ?
রসিক। অস্যার্থ হচ্ছে–
আসে তো আসুক রাতি, আসুক বা দিবা,
যায় যদি যাক নিরবধি।
তাহাদের যাতায়াতে আসে যায় কিবা
প্রিয় মোর নাহি আসে যদি।
অনেকগুলো দিন রাত এ-পর্যন্ত এসেছে এবং গেছে, কিন্তু তিনি আজ পর্যন্ত এসে পৌঁছলেন না– তাই, দিনই বলুন আর রাতই বলুন, ও দুটোর ’পরে আমার আর কিছুমাত্র শ্রদ্ধা নেই।
শ্রীশ। আচ্ছা রসিকবাবু, প্রিয়জন এখনই যদি হঠাৎ এসে পড়েন?
রসিক। তা হলে আমার দিকে তাকাবেন না, তোমাদের দুজনের মধ্যে একজনের ভাগেই পড়বেন!
শ্রীশ। তা হলে তদ্দণ্ডেই তিনি অরসিক বলে প্রকাশ হয়ে যাবেন।
রসিক। এবং পরদণ্ডেই পরমানন্দে কালযাপন করতে থাকবেন। তা, আমি ঈর্ষা করতে চাই নে শ্রীশবাবু! আমার ভাগ্যে যিনি আসতে বহু বিলম্ব করলেন, আমি তাঁকে তোমাদের উদ্দেশেই উৎসর্গ করলুম। দেবী, তোমার বরমাল্য গেঁথে আনো। আজ বসন্তের শুক্ল রজনী, আজ অভিসারে এসো!
মন্দং নিধেহি চরণৌ পরিধেহি নীলং
বাসঃ পিধেহি বলয়াবলিমঞ্চলেন।
মা জল্প সাহসিনি শারদচন্দ্রকান্ত-
দন্তাংশবস্তব তমাংসি সমাপয়ন্তি।
----
ধীরে ধীরে চলো তন্বী, পরো নীলাম্বর,
অঞ্চলে বাঁধিয়া রাখো কঙ্কণ মুখর।
কথাটি কোয়ো না, তব দন্ত-অংশুরুচি
পথের তিমিররাশি পাছে ফেলে মুছি।
শ্রীশ। রসিকবাবু, আপনার ঝুলি যে একেবারে ভরা। এমন কত তর্জমা করে রেখেছেন?
রসিক। বিস্তর– লক্ষ্মী তো এলেন না, কেবল বাণীকে নিয়েই দিন যাপন করছি।
শ্রীশ। ওহে বিপিন, অভিসার ব্যাপারটা কল্পনা করতে বেশ লাগে।
বিপিন। ওটা পুনর্বার চালাবার জন্যে চিরকুমার-সভায় একটা প্রস্তাব এনে দেখো-না।
শ্রীশ। কতকগুলো জিনিস আছে যার আইডিয়াটা এত সুন্দর যে, সংসারে সেটা চালাতে সাহস হয় না। যে রাস্তায় অভিসার হতে পারে, যেখানে কামিনীদের হার থেকে মুক্তো ছিঁড়ে ছড়িয়ে পড়ে, সে রাস্তা কি তোমার পটোলডাঙা স্ট্রীট! সে রাস্তা জগতে কোথাও নেই। বিরহিণীর হৃদয় নীলাম্বরী প’রে মনোরাজ্যের পথে ঐরকম করে বেরিয়ে থাকে– বক্ষের উপর থেকে মুক্তো ছিঁড়ে