শ্রীশ। চক্ষের সম্মুখ দিয়ে একজোড়া মায়া-স্বর্ণমৃগী ছুটে পালাল; ওরে নিরস্ত্র ব্যাধ, তোর ছোটবার ক্ষমতা নেই! নিকষের উপর সোনার রেখার মতো চকিত চোখের চাহনি দৃষ্টিপথের উপরে যেন আঁকা রয়ে গেল!
শ্রীশ। সন্ধেবেলায় এসে আপনাদের তো বিরক্ত করি নি রসিকবাবু?
রসিক। ভিক্ষুককে বিনিক্ষিপ্তঃ কিমিক্ষুর্নীরসো ভবেৎ? শ্রীশবাবু, আপনাকে দেখে বিরক্ত হব আমি কি এতবড়ো হতভাগ্য!
শ্রীশ। অবলাকান্তবাবু বাড়ি আছেন তো?
রসিক। আছেন বৈকি, এলেন বলে।
শ্রীশ। না না, যদি কাজে থাকেন তা হলে তাঁকে ব্যস্ত করে কাজ নেই– আমি কুঁড়ে লোক, বেকার মানুষের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই।
রসিক। সংসারে সেরা লোকেরাই কুঁড়ে এবং বেকার লোকেরাই ধন্য। উভয়ের সম্মিলন হলেই মণিকাঞ্চনযোগ। এই কুঁড়ে-বেকারের মিলনের জন্যেই তো সন্ধেবেলাটার সৃষ্টি হয়েছে। যোগীদের জন্যে সকালবেলা, রোগীদের জন্যে রাত্রি, কাজের লোকের জন্যে দশটা-চারটে, আর সন্ধেবেলাটা, সত্যি কথা বলছি, চিরকুমার-সভার অধিবেশনের জন্যে চতুর্মুখ সৃজন করেন নি। কী বলেন শ্রীশবাবু?
শ্রীশ। সে কথা মানতে হবে বৈকি, সন্ধ্যা চিরকুমার-সভার অনেক পূর্বেই সৃজন হয়েছে, সে আমাদের সভাপতি চন্দ্রবাবুর নিয়ম মানে না–
রসিক। সে, যে চন্দ্রের নিয়ম মানে তার নিয়মই আলাদা। আপনার কাছে খুলে বলি, হাসবেন না শ্রীশবাবু, আমার একতলার ঘরে কায়ক্লেশে একটি জানলা দিয়ে অল্প একটু জ্যোৎস্না আসে– শুক্লসন্ধ্যায় সেই জ্যোৎস্নার শুভ্র রেখাটি যখন আমার বক্ষের উপর এসে পড়ে তখন মনে হয় কে আমার কাছে কী খবর পাঠালে গো! শুভ্র একটি হংসদূত কোন বিরহিণীর হয়ে এই চিরবিরহীর কানে কানে বলছে–
অলিন্দে কালিন্দীকমলসুরভৌ কুঞ্জবসতের্-
বসন্তীং বাসন্তীনবপরিমলোদ্গারচিকুরাং।
ত্বদুৎসঙ্গে লীনাং মদমুকুলিতাক্ষীং পুনরিমাং
কদাহং সেবিষ্যে কিসলয়কলাপব্যজনিনী।
শ্রীশ। বেশ বেশ রসিকবাবু, চমৎকার!! কিন্তু ওর মানেটা বলে দিতে হবে। ছন্দের ভিতর দিয়ে ওর রসের গন্ধটা পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু অনুস্বার বিসর্গ দিয়ে একেবারে এঁটে বন্ধ করে রেখেছে।
রসিক। বাংলায় একটা তর্জমাও করেছি, পাছে সম্পাদকরা খবর পেয়ে হুড়াহুড়ি লাগিয়ে দেয় তাই লুকিয়ে রেখেছি– শুনবেন শ্রীশবাবু?
কুঞ্জকুটিরের স্নিগ্ধ অলিন্দের ’পর