Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


মালঞ্চ - প্রথম অঙ্ক - প্রথম দৃশ্য, ৪
মালঞ্চ

নীরজা। এত তাড়া কিসের?

সরলা। কাল রাত্রে তালা ভেঙে টাকা চুরির খবর এসেছে।

নীরজা। টানাটানি করে পাঁচ মিনিটও কি সময় দিতে পারতেন না?

সরলা। কাল রাত্রে তোমার ব্যথা বেড়েছিল, ঘুমোতে পার নি। ভোরবেলায় ঘুমিয়ে পড়েছিলে,দরজা পর্যন্ত এসে ফিরে গেলেন। আমাকে বলে গেলেন, দুপুরের মধ্যে যদি নিজে না আসতে পারেন তবে এই ফুলটি তোমাকে দিই যেন।

নীরজা। (ফুলটা অবজ্ঞার সঙ্গে ঠেলে দিয়ে) জানো মার্কেটে এ ফুলের দাম কত? পাঠিয়ে দাও সেখানে, মিছে নষ্ট করবার দরকার কী।...জানো এ ফুলের নাম?

সরলা। এমারিলিস।

নীরজা। ভারি তো জানো তুমি। ওর নাম গ্র্যাণ্ডিফ্লোরা।

সরলা। তা হবে।

নীরজা। তা হবে মানে কী? নিশ্চয়ই তাই। আমি জানি নে?

ধীরে ধীরে সরলা প্রস্থানোদ্যত

শুনে যাও। কী করছিলে সমস্ত সকাল, কোথায় ছিলে?

সরলা। অর্কিডের ঘরে।

নীরজা। অর্কিডের ঘরে তোমার ঘন ঘন যাবার এত কী দরকার?

সরলা। পুরোনো অর্কিড চিরে ভাগ করে নতুন অর্কিড করবার জন্য আদিৎদা আমাকে বলে গিয়েছিলেন।

নীরজা। আনাড়ির মতো সব নষ্ট করবে তুমি। আমি নিজের হাতে হলা মালীকে তৈরি করে শিখিয়েছি, তাকে হুকুম করলে সে কি পারত না?. .দাও বন্ধ করে দাও ঐ জানলা।

সরলা। (জানালা বন্ধ করে দিয়ে) এইবার কমলালেবুর রস নিয়ে আসি।

নীরজা। না, কিছু আনতে হবে না। এখন যেতে পারো।

সরলা। মকরধ্বজ খাবার সময় হয়েছে।

নীরজা। না, দরকার নেই মকরধ্বজ। তোমার উপর বাগানের আর-কোনো কাজের ফরমাশ আছে নাকি?

সরলা। গোলাপের ডাল পুঁততে হবে।

নীরজা। তার সময় এই বুঝি! এ বুদ্ধি তাঁকে দিলে কে, শুনি।

সরলা। মফস্বল থেকে হঠাৎ অনেকগুলো অর্ডার এসেছে দেখে কোনোমতে আসছে বর্ষার আগেই বেশি করে গাছ বানাতে পণ করেছেন। আমি বারণ করেছিলুম।

নীরজা। বারণ করেছিলে বুঝি? আচ্ছা আচ্ছা, ডেকে দাও হলা মালীকে।

হলা মালীকে সরলা ডেকে আনল

(হলা মালীর প্রতি) বাবু হয়ে উঠেছ? গোলাপের ডাল পুঁততে হাতে খিল ধরে, দিদিমণি তোমার অ্যাসিস্টেণ্ট মালী না কি? বাবু শহর থেকে ফেরবার আগেই যতগুলো পারিস ডাল পুঁতবি; আজ তোদের ছুটি নেই বলে দিচ্ছি। পোড়া ঘাসপাতার সঙ্গে বালি মিশিয়ে জমি তৈরি করে নিস ঝিলের ডান পাড়িতে।