অক্ষয়। আমার বসবার ঘরে।
নীরবালা। তা হলে সে ঘরটা একটু সাজিয়ে গুজিয়ে দিই গে।
অক্ষয়। যতদিন আমি সে ঘরটা ব্যবহার করছি, একদিনও সাজাতে ইচ্ছে হয় নি বুঝি?
নীরবালা। তোমার জন্যে ঝড়ু বেহারা আছে, তবু বুঝি আশা মিটল না?
পুরবালা। কী হচ্ছে তোমাদের?
নীরবালা। মুখুজ্যেমশায়ের কাছে পড়া বলে নিতে এসেছি দিদি। তা উনি বলছেন, ওঁর বাইরের ঘরটা ভালো করে ঝেড়ে সাজিয়ে না দিলে উনি পড়াবেন না। তাই সেজদিদিতে আমাতে ওঁর ঘর সাজাতে যাচ্ছি। আয় ভাই।
নৃপবালা। তোর ইচ্ছে হয়েছে তুই ঘর সাজাতে যা-না– আমি যাব না।
নীরবালা। বাঃ, আমি একা খেটে মরব আর তুমি সুদ্ধ তার ফল পাবে, সে হবে না।
নৃপকে গ্রেফতার করিয়া লইয়া নীর চলিয়া গেল।
পুরবালা। সব গুছিয়ে নিয়েছি। এখনো ট্রেন যাবার দেরি আছে বোধ হয়।
অক্ষয়। যদি মিস করতে চাও তা হলে ঢের দেরি আছে।
পুরবালা। তা হলে চলো, আমাকে স্টেশনে পৌঁছে দেবে। চললুম রসিকদাদা– তুমি এখানে রইলে, এই শিশুগুলিকে একটু সামলে রেখো।
রসিক। কিছু ভেবো না দিদি, এরা সকলে আমাকে যেরকম বিপরীত ভয় করে, টুঁ শব্দটি করতে পারবে না।
শৈল। দিদিভাই, তুমি একটু থামো। আমি এই কাপড়টা ছেড়ে এসে তোমাকে প্রণাম করছি।
পুরবালা। কেন? ছাড়তে মন গেল যে?
শৈল। না ভাই, এ কাপড়ে নিজেকে আর-একজন বলে মনে হয়, তোদের গায়ে হাত দিতে ইচ্ছে হয় না!রসিকদাদা, এই নাও, আমার গোঁফটা সাবধানে রেখে দাও, হারিয়ো না।
শ্রীশ তাহার বাসায় দক্ষিণের বারান্দায় একখানা বড়োহাতাওআলা কেদারার দুই হাতার উপর দুই পা তুলিয়া দিয়া শুক্লসন্ধ্যায় চুপচাপ বসিয়া সিগারেট ফুঁকিতেছিল। পাশে টিপায়ের উপর রেকাবিতে একটি গ্লাস বরফ দেওয়া লেমনেড ও স্তূপাকার কুন্দফুলের মালা।
বিপিন পশ্চাৎ হইতে প্রবেশ করিয়া তাহার স্বাভাবিক প্রবল গম্ভীর কণ্ঠে ডাকিয়া উঠিল, “কী গো সন্ন্যাসীঠাকুর।”
শ্রীশ তৎক্ষণাৎ হাতা হইতে পা নামাইয়া উঠিয়া বসিয়া উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিল। কহিল, “এখনো বুঝি ঝগড়া ভুলতে পারো নি?”