Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
মালিনী - দ্বিতীয় দৃশ্য, ১৬
মালিনী
চাহ কি আমায়? সত্যই কি নাম ধরে
বাহির-সংসার হতে ডেকেছিলে সবে
আপন নির্জন ঘরে বসে ছিনু যবে
সমস্ত জগৎ হতে অতিশয় দূরে
শতভিত্তি-অন্তরালে রাজ-অন্তঃপুরে
একাকী বালিকা। তবে সে তো স্বপ্ন নয়!
তাই তো কাঁদিয়াছিল আমার হৃদয়
না বুঝিয়া কিছু!
বাহির-সংসার হতে ডেকেছিলে সবে
আপন নির্জন ঘরে বসে ছিনু যবে
সমস্ত জগৎ হতে অতিশয় দূরে
শতভিত্তি-অন্তরালে রাজ-অন্তঃপুরে
একাকী বালিকা। তবে সে তো স্বপ্ন নয়!
তাই তো কাঁদিয়াছিল আমার হৃদয়
না বুঝিয়া কিছু!
চারুদত্ত। এসো,এসো মা জননী,
শতচিত্তশতদলে দাঁড়াও অমনি
করুণামাখানো মুখে।
করুণামাখানো মুখে।
মালিনী। আসিয়াছি আজ—
প্রথমে শিখাও মোরে কী করিব কাজ
তোমাদের। জন্ম লভিয়াছি রাজকুলে,
রাজকন্যা আমি— কখনো গবাক্ষ খুলে
চাহি নি বাহিরে, দেখি নাই এ সংসার
বৃহৎ বিপুল— কোথায় কী ব্যথা তার
জানি না তো কিছু। শুনিয়াছি দুঃখময়
বসুন্ধরা, সে দুঃখের লব পরিচয়
তোমাদের সাথে।
তোমাদের। জন্ম লভিয়াছি রাজকুলে,
রাজকন্যা আমি— কখনো গবাক্ষ খুলে
চাহি নি বাহিরে, দেখি নাই এ সংসার
বৃহৎ বিপুল— কোথায় কী ব্যথা তার
জানি না তো কিছু। শুনিয়াছি দুঃখময়
বসুন্ধরা, সে দুঃখের লব পরিচয়
তোমাদের সাথে।
দেবদত্ত। ভাসি নয়নের জলে,
মা, তোমার কথা শুনে।
সকলে। আমরা সকলে
পাষণ্ড পামর।
মালিনী। আজি মোর মনে হয়
অমৃতের পাত্র যেন আমার হৃদয়—
যেন সে মিটাতে পারে এ বিশ্বের ক্ষুধা,
যেন সে ঢালিতে পারে সান্ত্বনার সুধা
যত দুঃখ যেথা আছে সকলের ’পরে
অনন্ত প্রবাহে। দেখো দেখো নীলাম্বরে
মেঘ কেটে গিয়ে চাঁদ পেয়েছে প্রকাশ।
কী বৃহৎ লোকালয়, কী শান্ত আকাশ—
যেন সে মিটাতে পারে এ বিশ্বের ক্ষুধা,
যেন সে ঢালিতে পারে সান্ত্বনার সুধা
যত দুঃখ যেথা আছে সকলের ’পরে
অনন্ত প্রবাহে। দেখো দেখো নীলাম্বরে
মেঘ কেটে গিয়ে চাঁদ পেয়েছে প্রকাশ।
কী বৃহৎ লোকালয়, কী শান্ত আকাশ—