“ওরে যতীন, ভেবেছিলুম, আমার সব কান্না ফুরিয়ে গেছে— কিন্তু দেখতে পাচ্ছি, এখনো বাকি আছে, আজ আর পারছি নে।”
“মণিকে ডেকে দাও— তাকে ব’লে দেব কালকে রাতের জন্যে যেন— ”
“যাচ্ছি, বাবা। শম্ভু দরজার কাছে রইল, যদি কিছু দরকার হয় ওকে ডেকো।”
মাসি মণির শোবার ঘরে গিয়ে মেজের উপর বসিয়া ডাকিতে লাগিলেন, “ওরে,আয়— একবার আয়— আয় রে রাক্ষসী,যে তোকে তার সব দিয়েছে তার শেষ কথাটি রাখ্— সে মরতে বসেছে,তাকে আর মারিস নে।”
যতীন পায়ের শব্দে চমকিয়া উঠিয়া কহিল, “মণি! ”
“না, আমি শম্ভু। আমাকে ডাকছিলেন? ”
“একবার তোর বউঠাকরুনকে ডেকে দে।”
“কাকে? ”
“বউঠাকরুনকে।”
“তিনি তো এখনো ফেরেন নি।”
“কোথায় গেছেন? ”
“সীতারামপুরে।”
“আজ গেছেন? ”
“না, আজ তিন দিন হল গেছেন।”
ক্ষণকালের জন্য যতীনের সর্বাঙ্গ ঝিম্ঝিম্ করিয়া আসিল— সে চোখে অন্ধকার দেখিল। এতক্ষণ বালিশে ঠেসান দিয়া বসিয়াছিল, শুইয়া পড়িল। পায়ের উপর সেই পশমের শাল ঢাকা ছিল, সেটা পা দিয়া ঠেলিয়া দিল।
অনেকক্ষণ পরে মাসি যখন আসিলেন যতীন মণির কথা কিছুই বলিল না। মাসি ভাবিলেন, সে কথা উহার মনে নাই।
হঠাৎ যতীন এক সময়ে বলিয়া উঠিল, “মাসি, তোমাকে কি আমার সেদিনকার স্বপ্নের কথা বলেছি।”
“কোন্ স্বপ্ন।”