Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
ভগ্নহৃদয় - প্রথম সর্গ, ১২
ভগ্নহৃদয়
সখীরেও বুঝি ভুলিয়া যাবি!
বল্, সখি, প্রেমে পড়েছিস্ কার!
বল্, সখি, বল্ কি নাম তাহার!
বলিবি নি কি লো? না যদি বলিস্
চপলার মাথা খাবি!
বল্, সখি, প্রেমে পড়েছিস্ কার!
বল্, সখি, বল্ কি নাম তাহার!
বলিবি নি কি লো? না যদি বলিস্
চপলার মাথা খাবি!
মুরলা। [নেপথ্যে চাহিয়া ] জীবন্ত স্বপ্নের মত, ওই দেখ, কবি
একা একা ভ্রমিছেন আঁধার অটবী।
ওই যেন মূর্ত্তিমান ভাবনার মত
নত করি দু-নয়ন শুনিছেন একমন
স্তব্ধতার মুখ হতে কথা কত শত!
ওই যেন মূর্ত্তিমান ভাবনার মত
নত করি দু-নয়ন শুনিছেন একমন
স্তব্ধতার মুখ হতে কথা কত শত!
কবির প্রবেশ
কবি। বনদেবীটির মত এই যে মুরলা,
প্রভাতে কাননে বসি ভাবনাবিহ্বলা!
প্রকৃতি আপনি আসি লুকায়ে লুকায়ে
আপনার ভাষা তোরে দেছে কি শিখায়ে?
দিনরাত কলস্বরে তটিনী কি গান করে
তাহা কি বুঝিতে তুই পেরেছিস্ বালা?
তাই হেথা প্রতিদিন আসিস্ একালা!
মুরলা! আজিকে তোরে বনবালা-মত করে
চপলা সাজায়ে দিক্ দেখি একবার।
এলোথেলো কেশপাশে লতা দে বাঁধিয়া,
অলক সাজায়ে দে লো তৃণফুল দিয়া—
ফুলসাথে পাতাগুলি একটি একটি তুলি
অযতনে দে লো তাহা আঁচলে গাঁথিয়া!
হরিণশাবক যত ভুলিবে তরাস,
পদতলে বসি তোর চিবাইবে ঘাস।
প্রকৃতি আপনি আসি লুকায়ে লুকায়ে
আপনার ভাষা তোরে দেছে কি শিখায়ে?
দিনরাত কলস্বরে তটিনী কি গান করে
তাহা কি বুঝিতে তুই পেরেছিস্ বালা?
তাই হেথা প্রতিদিন আসিস্ একালা!
মুরলা! আজিকে তোরে বনবালা-মত করে
চপলা সাজায়ে দিক্ দেখি একবার।
এলোথেলো কেশপাশে লতা দে বাঁধিয়া,
অলক সাজায়ে দে লো তৃণফুল দিয়া—
ফুলসাথে পাতাগুলি একটি একটি তুলি
অযতনে দে লো তাহা আঁচলে গাঁথিয়া!
হরিণশাবক যত ভুলিবে তরাস,
পদতলে বসি তোর চিবাইবে ঘাস।
ছিঁড়ি ছিঁড়ি পাতাগুলি মুখে তার দিবি তুলি,
সবিস্ময়ে সুকুমার গ্রীবাটি বাঁকায়ে
অবাক্ নয়নে তারা রহিবে তাকায়ে!
আমি হোয়ে ভাবে ভোর দেখিব মুখানি তোর,
কল্পনার ঘুমঘোর পশিবে পরানে!
সবিস্ময়ে সুকুমার গ্রীবাটি বাঁকায়ে
অবাক্ নয়নে তারা রহিবে তাকায়ে!
আমি হোয়ে ভাবে ভোর দেখিব মুখানি তোর,
কল্পনার ঘুমঘোর পশিবে পরানে!