বলা বাহুল্য, বিদ্যাচর্চা বেশিদূর এগোয় নি। আমার নিশ্চিত বিশ্বাস অরুণা তার বাবার চাতুরি স্পষ্টই ধরেছে আর মনে মনে বলেছে, এমন আদর্শ বাবা অন্য কোনো পরিবারে আজ পর্যন্ত অবতীর্ণ হয় নি।
কোয়ান্টম থিওরির ঠিক শুরুতেই বাজল টেলিফোনের ঘন্টা — ধড়ফড়িয়ে উঠে বললেম, “ জরুরি কাজের ডাক। তোমরা এক কাজ করো, ততক্ষণ পার্লার টেনিস খেলো, ছুটি পেলেই আবার আসব ফিরে। ”
টেলিফোনে আওয়াজ এল, “ হ্যালো, এটা কি বারোশো অমুক নম্বর। ”
আমি বললেম, “ না, এখানকার নম্বর সাতশো অমুক। ”
পরক্ষণেই নিচের ঘরে গিয়ে একখানা বাসি খবরের কাগজ তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করলেম, অন্ধকার হয়ে এল, দিলেম বাতি জ্বেলে।
সুনেত্রা এল ঘরে। অত্যন্ত গম্ভীর মুখ। আমি হেসে বললেম, “ মিটিয়রলজিস্ট্ তোমার মুখ দেখলে ঝড়ের সিগ্ নাল দিত। ”
ঠাট্টায় যোগ না দিয়ে সুনেত্রা বললে, “ কেন তুমি শৈলেনকে অমন করে প্রশ্রয় দাও বারে বারে। ”
আমি বললেম, “ প্রশ্রয় দেবার লোক অদৃশ্যে আছে ওর অন্তরাত্মায়। ”
“ ওদের দেখাশোনাটা কিছুদিন বন্ধ রাখতে পারলে এই ছেলেমানুষিটা কেটে যেত আপনা হতেই। ”
“ ছেলেমানুষির কসাইগিরি করতে যাবই বা কেন। দিন যাবে, বয়স বাড়বে, এমন ছেলেমানুষি আর তো ফিরে পাবে না কোনো কালে। ”
“ তুমি গ্রহনক্ষত্র মান ' না, আমি মানি। ওরা মিলতে পারে না। ”
“ গ্রহনক্ষত্র কোথায় কী ভাবে মিলেছে চোখে পড়ে না, কিন্তু ওরা দুজনে যে মিলেছে অন্তরে অন্তরে সেটা দেখা যাচ্ছে খুব স্পষ্ট করেই। ”
“ তুমি বুঝবে না আমার কথা। যখনি আমরা জন্মাই তখনি আমাদের যথার্থ দোসর ঠিক হয়ে থাকে। মোহের ছলনায় আর-কাউকে যদি স্বীকার করে নিই তবে তাতেই ঘটে অজ্ঞাত অসতীত্ব। নানা দুঃখে বিপদে তার শাস্তি। ”
“ যথার্থ দোসর চিনব কী করে। ”
“ নক্ষত্রের স্বহস্তে স্বাক্ষর-করা দলিল আছে। ”
আর লুকোনো চলল না।
আমার শ্বশুর অজিতকুমার ভট্টাচার্য। বনেদি পণ্ডিত-বংশে তাঁর জন্ম। বাল্যকাল কেটেছে চতুষ্পাঠীর আবহাওয়ায়। পরে কলকাতায় এসে কলেজে নিয়েছেন এম. এ. ডিগ্রি গণিতে। ফলিত জ্যোতিষে তাঁর যেমন বিশ্বাস ছিল তেমনি ব্যুৎপত্তি। তাঁর বাবা ছিলেন পাকা নৈয়ায়িক, ঈশ্বর তাঁর মতে অসিদ্ধ ; আমার শ্বশুরও দেবদেবী কিছুই মানতেন না তার প্রমাণ পেয়েছি। তাঁর সমস্ত