Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


রুদ্রচণ্ড - সপ্তম দৃশ্য, ২২
রুদ্রচণ্ড
বহুদূর পর্য্যটনে শ্রান্ত সৈন্যদল—
থাম রুদ্র, বলি আমি, কথা মোর শোন—
আজ এক রাত্রি-তরে এ অরণ্য-মাঝে
রাজ-রাজ মহারাজ চাহেন আশ্রয়!
রুদ্র।      কি বলিলি দূত! তোর মহম্মদ ঘোরী,
পৃথ্বীরাজে আক্রমিতে আসিতেছে হেথা!
দূত।      এ বনে তো লোক নাই? ধীরে কথা কও!
রুদ্র।     ধীরে ক’ব! যাব আমি নগরে নগরে,
ঊর্দ্ধকণ্ঠে কব আমি রাজপথে গিয়া,
‘ম্লেচ্ছ সেনাপতি এক মহম্মদ ঘোরী
তস্করের মত আসে আক্রমিতে দেশ!’
দূত।     শোন রুদ্র, পৃথ্বী তব রাজ্যধন কেড়ে
নির্ব্বাসিত করেছেন এ অরণ্যদেশে—
রুদ্র।     সংবাদের-আবর্জনা-ভিক্ষুক কুক্কুর,
এ সংবাদ কোথা হতে করিলি সংগ্রহ?
দূত।     ধৈর্য্য ধর। পৃথ্বী তব রাজ্যধন লয়ে
নির্ব্বাসিত করেছেন এ অরণ্যদেশে!
প্রতিহিংসা সাধিবার সাধ থাকে যদি
এই তার উপযুক্ত হয়েছে সময়।
মহম্মদ ঘোরী হেথা—
রুদ্র।                    মহম্মদ ঘোরী?
কেন, আমার কি কাছে ছুরি নাই মূঢ়!
এত দিন বক্ষে তারে করিনু পোষণ,
প্রতি দণ্ডে দণ্ডে তারে দিয়েছি আশ্বাস।
আজ কোথা হতে আসি মহম্মদ ঘোরী
তাহার মুখের গ্রাস লইবে কাড়িয়া?
যেমন পৃথ্বীর শত্রু মহম্মদ ঘোরী
তেমনি আমারো শত্রু কহি তোরে দূত!
পৃথ্বীর রাজত্ব প্রাণ এসেছে কাড়িতে,
সমস্ত জগৎ মোর ছিনিতে এসেছে।
এখনি নগরে যাব কহি তোরে আমি।
অশুভ বারতা এই করিব প্রচার।