নবীন বললে, “ও-মানুষের ভক্তির প্রকাশ ঐরকমই। এই জাতের লোকেরাই ভিতরে ভিতরে যাকে শ্রেষ্ঠ বলে জানে বাইরে তাকে মারে। কেউ কেউ বলে রামের প্রতি রাবণের অসাধারণ ভক্তি ছিল, তাই বিশ হাত দিয়ে নৈবেদ্য চালাত। আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি দাদার সঙ্গে বউরানীর দেখাসাক্ষাৎ সহজে হবে না।”
“তা বললে চলবে না, কিছু উপায় করতেই হবে।”
“উপায় মাথায় এসেছে।”
“কী বলো দেখি।”
“বলতে পারব না।”
“কেন বলো তো?”
“লজ্জা বোধ করছি।”
“আমাকেও লজ্জা?”
“তোমাকেই লজ্জা।”
“কারণটা শুনি?”
“দাদাকে ঠকাতে হবে। সে তোমার শুনে কাজ নেই।”
“যাকে ভালোবাসি তার জন্যে ঠকাতে একটু সংকোচ করি নে।”
“ঠকানো বিদ্যেয় আমার উপর দিয়েই হাত পাকিয়েছ বুঝি?”
“ও-বিদ্যে সহজে খাটাবার উপযুক্ত এমন মানুষ পাব কোথায়?”
“ঠাকরুন, রাজিনামা লিখে-পড়ে দিচ্ছি, যখন খুশি ঠকিয়ো।”
“এত ফুর্তি কেন শুনি?”
“বলব? বিধাতা তোমাদের হাতে ঠকাবার যে-সব উপায় দিয়েছেন তাতে মধু দিয়েছেন ঢেলে। সেই মধুময় ঠকানোকেই বলে মায়া।”
“সেটা তো কাটানোই ভালো।”
“সর্বনাশ! মায়া গেলে সংসারে রইল কী? মূর্তির রঙ খসিয়ে ফেললে বাকি থাকে খড়মাটি। দেবী, অবোধকে ভোলাও, ঠকাও, চোখে ঘোর লাগাও, মনে নেশা জাগাও, যা খুশি করো।”
এর পরে যা কথাবার্তা চলল সে একেবারেই কাজের কথা নয়, এ গল্পের সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই।
মীটিঙে এইবার মধুসূদনের প্রথম হার। এ পর্যন্ত ওর কোনো প্রস্তাব কোনো ব্যবস্থা কেউ কখনো টলায় নি। নিজের ’পরে ওর বিশ্বাস যেমন, ওর প্রতি ওর সহযোগীদের তেমনি বিশ্বাস। এই ভরসাতেই মীটিঙে কোনো জরুরি প্রস্তাব পাকা করে নেবার আগেই কাজ অনেকদূর এগিয়ে রাখে। এবারে পুরোনো নীলকুঠিওয়ালা একটা পত্তনি তালুক ওদের নীলের কারবারের শামিল কিনে নেবার বন্দোবস্ত করছিল। এ নিয়ে খরচপত্রও হয়ে গেছে। প্রায় সমস্তই ঠিকঠাক; দলিল স্ট্যাম্পে চড়িয়ে রেজেস্টারি করে দাম চুকিয়ে দেবার অপেক্ষা; যে-সব লোক নিযুক্ত করা আবশ্যক তাদের আশা দিয়ে রাখা হয়েছে; এমন সময় এই বাধা। সম্প্রতি ওদের কোনো