শ্রীশ। এই মুগ্ধভাব যদি রাখতে চান তা হলে এই বেলা সরে পড়ুন। বিনয়গুণে অধিক টান সয় না।
বনমালী। কন্যার বাপ যথেষ্ট টাকা দিতে রাজি আছেন।
শ্রীশ। শহরে ভিক্ষুকের তো অভাব নেই। ওহে বিপিন, একটু পা চালিয়ে এগোও– কাঁহাতক রাস্তায় দাঁড়িয়ে বকাবকি করি? তোমার আমোদ বোধ হচ্ছে, কিন্তু এরকম সদালাপ আমার ভালো লাগে না।
বিপিন। পা চালিয়ে পালাই কোথায়? ভগবান এঁকেও যে লম্বা এক জোড়া পা দিয়েছেন।
শ্রীশ। যদি পিছু ধরেন তা হলে ভগবানের সেই দান মানুষের হাতে পড়ে খোওয়াতে হবে।
“মুখুজ্যেমশায়!”
অক্ষয় বলিলেন, “আজ্ঞে করো।”
শৈল কহিল, “কুলীনের ছেলে দুটোকে কোনো ফিকিরে তাড়াতে হবে।”
অক্ষয় উৎসাহপূর্বক কহিলেন, “তা তো হবেই।” বলিয়া রামপ্রসাদী সুরে গান জুড়িয়া দিলেন–
দেখব কে তোর কাছে আসে!
তুই রবি একেশ্বরী, একলা আমি রইব পাশে।
শৈল হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “একেশ্বরী?”
অক্ষয় বলিলেন, “নাহয় তোমরা চার ঈশ্বরীই হলে, শাস্ত্রে আছে অধিকন্তু ন দোষায়।”
শৈল কহিল, “আর, তুমিই একলা থাকবে? ওখানে বুঝি অধিকন্তু খাটে না?”
অক্ষয় কহিলেন, “ওখানে শাস্ত্রের আর-একটা পবিত্র বচন আছে– সর্বমত্যন্তগর্হিতং।”
শৈল। কিন্তু মুখুজ্যেমশায়, ও পবিত্র বচনটা তো বরাবর খাটবে না। আরো সঙ্গী জুটবে।
অক্ষয় বলিলেন, “তোমাদের এই একটি শালার জায়গায় দশশালা বন্দোবস্ত হবে? তখন আবার নূতন কার্যবিধি দেখা যাবে। ততদিন কুলীনের ছেলেটেলেগুলোকে ঘেঁষতে দিচ্ছি নে!”
এমন সময় চাকর আসিয়া খবর দিল, দুটি বাবু আসিয়াছে। শৈল কহিল, “ঐ বুঝি তারা এল। দিদি আর মা ভাঁড়ারে ব্যস্ত আছেন, তাঁদের অবকাশ হবার পূর্বেই ওদের কোনোমতে বিদায় করে দিয়ো।”
অক্ষয় জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী বকশিশ মিলবে?”
শৈল কহিল, “আমরা তোমার সব শালীরা মিলে তোমাকে শালীবাহন রাজা খেতাব দেব।”
অক্ষয়। শালীবাহন দি সেকেণ্ড?
শৈল। সেকেণ্ড হতে যাবে কেন? সে শালীবাহনের নাম ইতিহাস থেকে একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তুমি হবে শালীবাহন দি গ্রেট।
অক্ষয়। বল কী? আমার রাজ্যকাল থেকে জগতে নূতন সাল প্রচলিত হবে? এই বলিয়া অত্যন্ত সাড়ম্বর তান– সহকারে ভৈরবীতে গান ধরিলেন–
তুমি আমায় করবে মস্ত লোক!