মধুসূদন বাইরে গিয়ে নবীনকে ডেকে পাঠিয়ে বললে, “বড়োবউকে তোরা খেপিয়েছিস।”
“দাদা, কালই তো আমরা যাচ্ছি, তোমার কাছে ভয়ে ভয়ে ঢোঁক গিলে কথা কব না। আমি আজ এই স্পষ্ট বলে যাচ্ছি, বড়োবউরানীকে খেপাবার জন্যে সংসারে আর কারো দরকার হবে না— তুমি একাই পারবে। আমরা থাকলে তবু যদি-বা কিছু ঠাণ্ডা রাখতে পারতুম, কিন্তু সে তোমার সইল না।”
মধুসূদন গর্জন করে উঠে বললে, “জ্যাঠামি করিস নে। রজবপুরে যাবার কথা তোরাই ওকে শিখিয়েছিস।”
“এ কথা ভাবতেই পারি নে তো শেখাব কি?”
“দেখ্, এই নিয়ে যদি ওকে নাচাস তোদের ভালো হবে না স্পষ্টই বলে দিচ্ছি।”
“দাদা, এ-সব কথা বলছ কাকে? যেখানে বললে কাজে লাগে বলো গে।”
“তোরা কিছু বলিস নি?”
“এই তোমার গা ছুঁয়ে বলছি, কল্পনাও করি নি।”
“বড়োবউ যদি জেদ ধরে বসে তা হলে কী করবি তোরা?”
“তোমাকে ডেকে আনব। তোমার পাইক বরকন্দাজ পেয়াদা আছে, তুমি ঠেকাতে পার। তার পরে তোমার শত্রুপক্ষেরা এই যুদ্ধের সংবাদ যদি কাগজে রটায় তা হলে মেজোবউকে সন্দেহ করে বোসো না।”
মধুসূদন আবার তাকে ধমক দিয়ে বললে, “চুপ কর্! বড়োবউ যদি রজবপুরে যেতে চায় তো যাক, আমি ঠেকাব না।”
“আমরা তাঁকে খাওয়াব কী করে?”
“তোমার স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে। যা, যা বলছি! বেরো বলছি ঘর থেকে।”
নবীন বেরিয়ে গেল। মধুসূদন ওডিকলোন-ভিজনো পটি কপালে জড়িয়ে আবার একবার আপিসে যাবার সংকল্প মনে দৃঢ় করতে লাগল।
নবীনের কাছে মোতির মা সব কথা শুনে দৌড়ে গেল কুমুর শোবার ঘরে। দেখলে তখনো সে কাপড় চোপড় পাট করছে তোলবার জন্যে। বললে, “এ কী করছ বউরানী?”
“তোমাদের সঙ্গে যাব।”
“তোমাকে নিয়ে যাবার সাধ্য কী আমার!”
“কেন?”
“বড়োঠাকুর তা হলে আমাদের মুখ দেখবেন না।”
“তা হলে আমারও দেখবেন না।”
“তা সে যেন হল, আমরা যে বড়ো গরিব।”
“আমিও কম গরিব না, আমারও চলে যাবে।”
“লোকে যে বড়োঠাকুরকে নিয়ে হাসবে।”
“তা বলে আমার জন্যে তোমরা শাস্তি পাবে এ আমি সইব না।”
“কিন্তু দিদি, তোমার জন্যে তো শাস্তি নয়, এ আমাদের নিজের পাপের জন্যেই।”