বিপিন। শিলা আপনি ভাসে না হে! তাকে আর-কিছুতে অকূলে ভাসিয়েছে। আমার যথাবুদ্ধি তার ইতিহাসটুকু সংকলন করেছি।
শ্রীশ। তোমার বুদ্ধির দৌড়টা কিরকম শুনি।
বিপিন। জানই তো, পূর্ণ সন্ধ্যাবেলায় চন্দ্রবাবুর কাছে পড়ার নোট নিতে যায়। সেদিন আমি আর পূর্ণ একসঙ্গেই একটু সকাল-সকাল চন্দ্রবাবুর বাসায় গিয়েছিলেম। তিনি একটা মিটিং থেকে সবে এসেছেন। বেহারা কেরোসিন জ্বেলে দিয়ে গেছে– পূর্ণ বইয়ের পাত ওলটাচ্ছে, এমন সময়– কী আর বলব ভাই, সে বঙ্কিমবাবুর নভেল বিশেষ– একটি কন্যা পিঠে বেণী দুলিয়ে–
শ্রীশ। বল কী হে বিপিন!
বিপিন। শোনোই-না। এক হাতে থালায় করে চন্দ্রবাবুর জন্যে জলখাবার আর-এক হাতে জলের গ্লাস নিয়ে হঠাৎ ঘরের মধ্যে এসে উপস্থিত। আমাদের দেখেই তো কুন্ঠিত, সচকিত, লজ্জায় মুখ রক্তিমবর্ণ। হাত জোড়া, মাথায় কাপড় দেবার জো নেই। তাড়াতাড়ি টেবিলের উপর খাবার রেখেই ছুট। ব্রাহ্ম বটে, কিন্তু তেত্রিশ কোটির সঙ্গে লজ্জাকে বিসর্জন দেয় নি এবং সত্য বলছি শ্রীকেও রক্ষা করেছে।
শ্রীশ। বল কী বিপিন, দেখতে ভালো বুঝি?
বিপিন। দিব্যি দেখতে। হঠাৎ যেন বিদ্যুতের মতো এসে পড়ে পড়াশুনোয় বজ্রাঘাত করে গেল।
শ্রীশ। আহা, কই, আমি তো একদিনও দেখি নি! মেয়েটি কে হে!
বিপিন। আমাদের সভাপতির ভাগ্নী, নাম নির্মলা।
শ্রীশ। কুমারী?
বিপিন। কুমারী বৈকি। তার ঠিক পরেই পূর্ণ হঠাৎ আমাদের কুমারসভায় নাম লিখিয়েছে।
শ্রীশ। পূজারি সেজে ঠাকুর চুরি করবার মতলব?
বিপিন। কী মশায়, আপনি কে?
উক্ত ব্যক্তি। আজ্ঞে, আমার নাম শ্রী বনমালী ভট্টাচার্য, ঠাকুরের নাম ৺রামকমল ন্যায়চুঞ্চু, নিবাস–
শ্রীশ। আর অধিক আমাদের ঔৎসুক্য নেই। এখন কী কাজে এসেছেন সেইটে–
বনমালী। কাজ কিছুই নয়। আপনারা ভদ্রলোক, আপনাদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়–
শ্রীশ। কাজ আপনার না থাকে আমাদের আছে। এখন, অন্য কোনো ভদ্রলোকের সঙ্গে যদি আলাপ-পরিচয় করতে যান তা হলে আমাদের একটু–
বনমালী। তবে কাজের কথাটা সেরে নিই।
শ্রীশ। সেই ভালো।
বনমালী। কুমারটুলির নীলমাধব চৌধুরি মশায়ের দুটি পরমাসুন্দরী কন্যা আছে– তাঁদের বিবাহযোগ্য বয়স হয়েছে–
শ্রীশ। হয়েছে তো হয়েছে, আমাদের সঙ্গে তার সম্বন্ধটা কী!
বনমালী। সম্বন্ধ তো আপনারা একটু মনোযোগ করলেই হতে পারে। সে আর শক্ত কী। আমি সমস্তই ঠিক করে দেব।
বিপিন। আপনার এত দয়া অপাত্রে অপব্যয় করছেন।
বনমালী। অপাত্র! বিলক্ষণ! আপনাদের মতো সৎপাত্র পাব কোথায়। আপনাদের বিনয়গুণে আরো মুগ্ধ হলেম।