পাহারা বা মন্ত্রণাতে।
বাড়ির কর্তা যখন বাঁচিয়া ছিলেন তিনি রসিককে খুড়া বলিতেন। রসিক দীর্ঘকাল হইতে তাঁহার আশ্রয়ে থাকিয়া বাড়ির সুখদুঃখে সম্পূর্ণ জড়িত হইয়া ছিলেন। গিন্নি অগোছালো থাকাতে কর্তার অবর্তমানে তাঁহার কিছু অযত্ন-অসুবিধা হইতেছিল এবং জগত্তারিণীর অসংগত ফরমাশ খাটিয়া তাঁহার অবকাশের অভাব ঘটিয়াছিল। কিন্তু তাঁহার এই-সমস্ত অভাব-অসুবিধা পূরণ করিবার লোক ছিল শৈল। শৈল থাকাতেই মাঝে মাঝে ব্যামোর সময় তাঁহার পথ্য এবং সেবার ত্রুটি হইতে পারে নাই; এবং তাহারই সহকারিতায় তাঁহার সংস্কৃতসাহিত্যের চর্চা পুরাদমেই চলিয়াছিল।
রসিকদা শৈলবালার অদ্ভুত প্রস্তাব শুনিয়া প্রথমটা হাঁ করিয়া রহিলেন, তাহার পর হাসিতে লাগিলেন, তাহার পর রাজি হইয়া গেলেন। কহিলেন “ভগবান হরি নারী-ছদ্মবেশে পুরুষকে ভুলিয়েছিলেন, তুই শৈল যদি পুরুষ-ছদ্মবেশে পুরুষকে ভোলাতে পারিস তা হলে হরিভক্তি উড়িয়ে দিয়ে তোর পুজোতেই শেষ বয়সটা কাটাব। কিন্তু মা যদি টের পান?”
শৈল। তিন কন্যাকে কেবলমাত্র স্মরণ করেই মা মনে মনে এত অস্থির হয়ে ওঠেন যে, তিনি আমাদের আর খবর রাখতে পারেন না। তাঁর জন্যে ভেবো না।
রসিক। কিন্তু সভায় কিরকম করে সভ্যতা করতে হয়, সে আমি কিছুই জানি নে।
শৈল। আচ্ছা সে আমি চালিয়ে নেব।
শ্রীশ। তা যাই বল, অক্ষয়বাবু যখন আমাদের সভাপতি ছিলেন তখন আমাদের চিরকুমার-সভা জমেছিল ভালো। হাল সভাপতি চন্দ্রবাবু কিছু কড়া।
বিপিন। তিনি থাকতে রস কিছু বেশি জমে উঠেছিল। চিরকৌমার্যব্রতের পক্ষে রসাধিক্যটা ভালো নয় আমার তো এই মত।
শ্রীশ। আমার মত ঠিক উলটো। আমাদের ব্রত কঠিন বলেই রসের দরকার বেশি। রুক্ষ মাটিতে ফসল ফলাতে গেলে কি জলসিঞ্চনের প্রয়োজন হয় না? চিরজীবন বিবাহ করব না এই প্রতিজ্ঞাই যথেষ্ট, তাই বলেই কি সব দিক থেকেই শুকিয়ে মরতে হবে?
বিপিন। যাই বল, হঠাৎ কুমারসভা ছেড়ে দিয়ে বিবাহ করে অক্ষয়বাবু আমাদের সভাটাকে যেন আলগা করে দিয়ে গেছেন। ভিতরে ভিতরে আমাদের সকলেরই প্রতিজ্ঞার জোর কমে গেছে।
শ্রীশ। কিছুমাত্র না। আমার নিজের কথা বলতে পারি, আমার প্রতিজ্ঞার বল আরো বেড়েছে। যে ব্রত সকলে অনায়াসেই রক্ষা করতে পারে তার উপরে শ্রদ্ধা থাকে না।
বিপিন। একটা সুখবর দিই শোনো।
শ্রীশ। তোমার বিবাহের সম্বন্ধ হয়েছে না কি?
বিপিন। হয়েছে বৈকি, তোমার দৌহিত্রীর সঙ্গে। ঠাট্টা রাখো, পূর্ণ কাল কুমারসভার সভ্য হয়েছে।
শ্রীশ। পূর্ণ! বল কী! তা হলে তো শিলা জলে ভাসল!