![](/themes/rabindra/logo.png)
উপনন্দ। আমার পুঁথি নকল করতে অনেকখানি বাকি আছে।
ছেলেরা। সে বুঝি কাজ! ভারি তো কাজ!—ঠাকুর, তুমি ওকে বলো-না। ও আমাদের কথা শুনবে না। কিন্তু উপনন্দকে না হলে মজা হবে না।
সন্ন্যাসী। ( পাশে বসিয়া ) বাছা, তুমি কী কাজ করছ? আজ তো কাজের দিন না।
উপনন্দ। ( সন্ন্যাসীর মুখের দিকে ক্ষণকাল চাহিয়া, পায়ের ধুলা লইয়া ) আজ ছুটির দিন। কিন্তু আমার ঋণ আছে, শোধ করতে হবে, তাই আজ কাজ করছি।
ঠাকুরদাদা। উপনন্দ, জগতে তোমার আবার ঋণ কিসের ভাই?
উপনন্দ। ঠাকুরদাদা, আমার প্রভু মারা গিয়েছেন, তিনি লক্ষেশ্বরের কাছে ঋণী—সেই ঋণ আমি পুঁথি লিখে শোধ দেব।
ঠাকুরদাদা। হায় হায়, তোমার মতো কাঁচা বয়সের ছেলেকেও ঋণ শোধ করতে হয়! আর, এমন দিনেও ঋণশোধ!—ঠাকুর, আজ নতুন উত্তরে হাওয়ায় ও পারে কাশের বনে ঢেউ দিয়েছে, এ পারে ধানের খেতের সবুজে চোখ একেবারে ডুবিয়ে দিলে, শিউলিবন থেকে আকাশে আজ পুজোর গন্ধ ভরে উঠেছে, এরই মাঝখানে ঐ ছেলেটি আজ ঋণশোধের আয়োজনে বসে গেছে—এও কি চক্ষে দেখা যায়?
সন্ন্যাসী। বল কী, এর চেয়ে সুন্দর কি আর কিছু আছে! ঐ ছেলেটিই তো আজ সারদার বরপুত্র হয়ে তাঁর কোল উজ্জ্বল করে বসেছে। তিনি তাঁর আকাশের সমস্ত সোনার আলো দিয়ে ওকে বুকে চেপে ধরেছেন। আহা, আজ এই বালকের ঋণশোধের মতো এমন শুভ্র ফুলটি কি কোথাও ফুটেছে—চেয়ে দেখো তো! লেখো, লেখো বাবা, তুমি লেখো, আমি দেখি। তুমি পঙ্ক্তির পর পঙ্ক্তি লিখছ, আর ছুটির পর ছুটি পাচ্ছ। তোমার এত ছুটির আয়োজন আমরা তো পণ্ড করতে পারব না। দাও বাবা, একটা পুঁথি আমাকে দাও, আমিও লিখি। এমন দিনটা সার্থক হোক।
ঠাকুরদাদা। আছে আছে, চশমাটা ট্যাঁকে আছে, আমিও বসে যাই-না।
প্রথম বালক। ঠাকুর, আমরাও লিখব। সে বেশ মজা হবে।
দ্বিতীয় বালক। হাঁ হাঁ, সে বেশ মজা হবে।
উপনন্দ। বল কী ঠাকুর, তোমাদের যে ভারি কষ্ট হবে।
সন্ন্যাসী। সেইজন্যেই বসে গেছি। আজ আমরা সব মজা করে কষ্ট করব। কী বল বাবা-সকল? আজ একটা কিছু কষ্ট না করলে আনন্দ হচ্ছে না।
সকলে। ( হাততালি দিয়া ) হাঁ হাঁ, নইলে মজা কিসের!
প্রথম বালক। দাও দাও, আমাকে একটা পুঁথি দাও।
দ্বিতীয় বালক। আমাকেও একটা দাও-না।
উপনন্দ। তোমরা পারবে তো ভাই?
প্রথম বালক। খুব পারব। কেন পারব না?
উপনন্দ। শ্রান্ত হবে না তো?
দ্বিতীয় বালক। কক্খনো না।
উপনন্দ। খুব ধরে ধরে লিখতে হবে কিন্তু।
প্রথম বালক। তা বুঝি পারি নে! আচ্ছা, তুমি দেখো।