Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
তাসের দেশ -দ্বিতীয় দৃশ্য,১৩
তাসের দেশ
ছক্কা। ওহে ভাই পঞ্জা, একেবারে অসবর্ণ। কী জাতি তোমরা।
সদাগর। আমরা নাশক, নাসা থেকে উৎপন্ন।
পঞ্জা। কোনো উচ্চবংশীয় জাতির অমনতরো নাম তো শুনি নি।
সদাগর। হাইয়ের বাষ্পে তোমরা উড়ে গেছ উচ্চে, পরলোকের পারে; হাঁচির চোটে আমরা পড়েছি নীচে, এই ইহলোকের ধারে।
ছক্কা। পিতামহের নাসিকার অসংযমবশতই তোমরা এমন অদ্ভুত।
রাজপুত্র। এতক্ষণে ঠিক কথাটাই বেরিয়েছে তোমার মুখ থেকে, আমরা অদ্ভুত।
গান
আমরা নূতন যৌবনেরই
দূত,
আমরা চঞ্চল, আমরা অদ্ভুত।
আমরা বেড়া ভাঙি,
আমরা অশোকবনের রাঙা নেশায় রাঙি,
ঝঞ্ঝার বন্ধন ছিন্ন করে দিই,
আমরা বিদ্যুৎ।
আমরা করি ভুল।
অগাধ জলে ঝাঁপ দিয়ে
যুঝিয়ে পাই কূল।
যেখানে ডাক পড়ে
জীবন-মরণ-ঝড়ে
আমরা প্রস্তুত॥
আমরা চঞ্চল, আমরা অদ্ভুত।
আমরা বেড়া ভাঙি,
আমরা অশোকবনের রাঙা নেশায় রাঙি,
ঝঞ্ঝার বন্ধন ছিন্ন করে দিই,
আমরা বিদ্যুৎ।
আমরা করি ভুল।
অগাধ জলে ঝাঁপ দিয়ে
যুঝিয়ে পাই কূল।
যেখানে ডাক পড়ে
জীবন-মরণ-ঝড়ে
আমরা প্রস্তুত॥
ছক্কা-পঞ্জা। (পরস্পর মুখ চেয়ে) এ চলবে না, এ চলবে না।
রাজপুত্র। যা চলবে না তাকেই আমরা চালাই।
ছক্কা। কিন্তু, নিয়ম!
রাজপুত্র। বেড়ার নিয়ম ভাঙলেই পথের নিয়ম আপনিই বেরিয়ে পড়ে, নইলে এগোব কী করে।
পঞ্জা। ওরে ভাই, কী বলে এরা। এগোবে! অম্লানমুখে ব’লে বসল, এগোব।
রাজপুত্র। নইলে চলা কিসের জন্যে।
ছক্কা। চলা! চলবে কেন তুমি! চলবে নিয়ম।
গান
চলো নিয়ম-মতে।
দূরে তাকিয়ো নাকো,
ঘাড় বাঁকিয়ে নাকো,
চলো সমান পথে।
দূরে তাকিয়ো নাকো,
ঘাড় বাঁকিয়ে নাকো,
চলো সমান পথে।