![](/themes/rabindra/logo.png)
গোঁসাই। এই এদের কথা বলছ? আহা, এরা তো স্বয়ং কূর্ম-অবতার। বোঝার নীচে নিজেকে চাপা দিয়েছে বলেই সংসারটা টিকে আছে। ভাবলে শরীর পুলকিত হয়। বাবা ৪৭ফ, একবার ঠাউরে দেখো, যে মুখে নাম কীর্তন করি সেই মুখে অন্ন জোগাও তোমরা; শরীর পবিত্র হল যে নামাবলিখানা গায়ে দিয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সেখানা বানিয়েছ তোমরাই। এ কি কম কথা! আশীর্বাদ করি, সর্বদাই অবিচলিত থাকো, তা হলেই ঠাকুরের দয়াও তোমাদের 'পরে অবিচলিত থাকবে। বাবা, একবার কণ্ঠ খুলে বলো ‘হরি হরি’। তোমাদের সব বোঝা হালকা হয়ে যাক। হরিনাম আদাবন্তে চ মধ্যে চ।
চন্দ্রা। আহা, কী মধুর। বাবা, অনেকদিন এমন কথা শুনি নি। দাও দাও, আমাকে একটু পায়ের ধুলো দাও।
ফাগুলাল। এতক্ষণ অবিচলিত ছিলুম, কিন্তু আর তো পারি নে। সর্দার, এত বড়ো অপব্যয় কিসের জন্যে। প্রণামী আদায় করতে চাও রাজি আছি, কিন্তু ভণ্ডামি সইব না।
বিশু। ফাগুলাল খেপলে আর রক্ষে নেই, চুপ চুপ।
চন্দ্রা। ইহকাল পরকাল তুমি দু'ই খোওয়াতে বসেছ? তোমার গতি হবে কী। এমন মতি তোমার আগে ছিল না, আমি বেশ দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের উপরে ঐ নন্দিনীর হাওয়া লেগেছে।
গোঁসাই। যাই বল সর্দার, কী সরলতা! পেটে মুখে এক, এদের আমরা শেখাব কি, এরাই আমাদের শিক্ষা দেবে। বুঝেছ?
সর্দার। বুঝেছি বৈকি। এও বুঝেছি উৎপাত বেধেছে কোথা থেকে। এদের ভার আমাকেই নিতে হচ্ছে। প্রভুপাদ বরঞ্চ ও পাড়ায় নাম শুনিয়ে আসুন, সেখানে করাতীরা যেন একটু খিটখিট শুরু করছে।
গোঁসাই। কোন্ পাড়া বললে, সর্দারবাবা।
সর্দার। ঐ-যে ট-ঠ পাড়ায়। সেখানে ৭১ট হচ্ছে মোড়ল। মূর্ধন্য-ণয়ের ৬৫ যেখানে থাকে তার বাঁয়ে ঐ পাড়ার শেষ।
গোঁসাই। বাবা,দন্ত্য-ন পাড়া যদিও এখনো নড়্নড়্ করছে, মূর্ধন্য-ণরা ইদানীং অনেকটা মধুর রসে মজেছে। মন্ত্র নেবার মতো কান তৈরি হল বলে। তবু আরো কটা মাস পাড়ায় ফৌজ রাখা ভালো। কেননা, নাহংকারাৎ পরো রিপুঃ। ফৌজের চাপে অহংকারটার দমন হয়, তার পরে আমাদের পালা। তবে আসি।
চন্দ্রা। প্রভু, আশীর্বাদ করো, এই এদের যেন সুমতি হয়। অপরাধ নিয়ো না।
গোঁসাই। ভয় নেই মা-লক্ষ্মী, এরা সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
সর্দার। ওহে ৬৯ঙ, তোমাদের ওপাড়ার মেজাজটা যেন কেমন দেখছি!
বিশু। তা হতে পারে। গোঁসাইজি এদের কূর্ম-অবতার বললেন, কিন্তু শাস্ত্রমতে অবতারের বদল হয়। কূর্ম হঠাৎ বরাহ হয়ে ওঠে, বর্মের বদলে বেরিয়ে পড়ে দন্ত, ধৈর্যের বদলে গোঁ।
চন্দ্রা। বিশুবেয়াই, একটু থামো। সর্দারদাদা, আমার দরবারটা ভুলো না।
সর্দার। কিছুতেই না। শুনে রাখলুম, মনেও রাখব।
চন্দ্রা। আহা, দেখলে? সর্দার লোকটি কী সরেস! সবার সঙ্গেই হেসে কথা।
বিশু। মকরের দাঁতের শুরুতে হাসি, অন্তিমে কামড়।
চন্দ্রা। কামড়টা এর মধ্যে কোথায়?
বিশু। জান না, ওরা ঠিক করেছে এবার থেকে এখানে কারিগরের সঙ্গে তাদের স্ত্রীরা আসতে পারবে না?