Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


শৈশবসঙ্গীত - ভগ্নতরী -১২
শৈশবসঙ্গীত

বনে বনে চারি দিকে হাসিরাশি বাদ্যগান।

দুরগম শৈল যত, ঢাকা লতা গুলেম শত

তাদের হরিত হৃদে তিল মাত্র নাই স্থান।

ললিতার আঁখি হতে শুকায়েছে অশ্রুধার,

বসন্তগীতের সাথে বাজিছে হৃদয় তার।

পুরাণো পল্লব ত্যজি নবকিশলয়ে যথা

চারি দিকে বনে বনে সাজিয়াছে তরুলতা,

তেমনি গো ললিতার হৃদয়লতাটি ঘিরে

নবীন হরিতপ্রেম বিকশিছে ধীরে ধীরে।

ললিতা সে সুরেশের হাতে হাত জড়াইয়া

বসন্তহসিত বনে, ভ্রমিত হরষমনে,

করুণ চরণক্ষেপে ফুলরাশি মাড়াইয়া।

একটি দুর্গম শৈল সাগরের পড়েছে ঝুঁকি—

অতি ক্লেশে সেথা উঠি বসিয়া রহিত দুটি,

সায়াহ্নকিরণ জলে করিত গো ঝিকিমিকি।

লহরীরা শৈল-’পরে, শৈবালগুলির তরে

দিন রাত্রি খুদিতেছে নিকেতন শিলাসার।

ফুল-ভরা গুল্মগুলি সলিলে পড়েছে ঝুলি,

তরঙ্গের সাথে সাথে ওঠে পড়ে শতবার।

বিভলা মেদিনীবালা জোছনামদিরা-পানে,

হাসিছে সরসীখানি কাননের মাঝখানে,

সুরেশ যতনে অতি বাঁধি তরুশাখাগুলি

নৌকা নিরমিয়া এক সরসে দিয়াছে খুলি—

চড়ি সে নৌকার ‘পরে, জ্যোৎসনাসুপ্ত সরোবরে

সুরেশ মনের সুখে ভ্রমিত গো ফিরি ফিরি,

ললিতা থাকিত শুয়ে কোলে তার মাথা থুয়ে,

কখন বা মধুমাখা গান গেয়ে ধীরি ধীরি।

কখন বা সায়াহ্নের বিষণ্ন কিরণজালে,

অথবা জোছনা যবে কাঁপে বকুলের ডালে,

মৃদু মৃদু বসন্তের স্নিগ্ধ সমীরণ লাগি,