Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
শৈশবসঙ্গীত - ভগ্নতরী -৯
শৈশবসঙ্গীত
ললিতা কাতর রবে রুদ্ধকণ্ঠে কহে তবে,
“সখা গো ভেব না মোর তরে!
আমারে দিও না দেখা, বিজনে রহিব একা
বিজনেই নিপাতিব দেহ।
এ দগ্ধ জীবন মোর, কাঁদিয়া করিব ভোর,
জানিতেও পারিবে না কেহ!”
সুরেশ ব্যথিতহিয়া, একেলা বিজনে গিয়া
ভাবিত, কাঁদিত আনমনে—
প্রাণপণ করি তার তবুও ত ললিতার
পারিল না অশ্রুবিমোচনে।
সুরেশ প্রভাতে উঠি— সারাটি কানন লুটি
তুলিয়া আনিত ফুলভার,
ফুলঙ্গলি বাছি বাছি গাঁথি লয়ে মালাগাছি
ললিতারে দিত উপহার।
নির্ঝরে লইত জল, তুলিয়া আনিত ফল
আহারের তরে বালিকার।
যতন করিয়া কত— পর্ণশয্যা বিছাইত,
গুছাইত ঘরখানি তার।
. . .
শীতের তীব্রতা সহি, তপনকিরণে দহি—
করিয়া শতেক অত্যাচার,
মনের ভাবনা-ভরে অবসন্ন কলেবরে
পীড়া অতি হল ললিতার।
অনলে দহিছে বুক, শুকায়ে যেতেছে মুখ,
শুষ্ক অতি রসনা তৃষায়—
নিশ্বাস অনলময়, শয্যা অগ্নি মনে হয়,
ছটফট করে যাতনায়।
“সখা গো ভেব না মোর তরে!
আমারে দিও না দেখা, বিজনে রহিব একা
বিজনেই নিপাতিব দেহ।
এ দগ্ধ জীবন মোর, কাঁদিয়া করিব ভোর,
জানিতেও পারিবে না কেহ!”
সুরেশ ব্যথিতহিয়া, একেলা বিজনে গিয়া
ভাবিত, কাঁদিত আনমনে—
প্রাণপণ করি তার তবুও ত ললিতার
পারিল না অশ্রুবিমোচনে।
সুরেশ প্রভাতে উঠি— সারাটি কানন লুটি
তুলিয়া আনিত ফুলভার,
ফুলঙ্গলি বাছি বাছি গাঁথি লয়ে মালাগাছি
ললিতারে দিত উপহার।
নির্ঝরে লইত জল, তুলিয়া আনিত ফল
আহারের তরে বালিকার।
যতন করিয়া কত— পর্ণশয্যা বিছাইত,
গুছাইত ঘরখানি তার।
. . .
শীতের তীব্রতা সহি, তপনকিরণে দহি—
করিয়া শতেক অত্যাচার,
মনের ভাবনা-ভরে অবসন্ন কলেবরে
পীড়া অতি হল ললিতার।
অনলে দহিছে বুক, শুকায়ে যেতেছে মুখ,
শুষ্ক অতি রসনা তৃষায়—
নিশ্বাস অনলময়, শয্যা অগ্নি মনে হয়,
ছটফট করে যাতনায়।