Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
শৈশবসঙ্গীত -ফুলবালা -২০
শৈশবসঙ্গীত
কোথায় আরাম আছে?
তোমারে ছাড়িয়া দুখিনী মালতী
যাবে আর কার কাছে?”
অশোকের হাতে দিয়া দুটি হাত
কত যে কাঁদিল বালা!
কাঁদিছে দুজনে বসিয়া বিজনে
ভুলিয়া সকল জ্বালা!
উড়িল দুজনে পাশাপাশি হয়ে
হাত ধরাধরি করি—
সাজিল তখন পৃথিবী জগৎ
হাসিতে আনন ভরি!
গাহিয়া উঠিল হরষে মির,
নিঝর বহিল হাসি—
দুলিয়া দুলিয়া নাচিল কুসুম
ঢালিয়া সুরভিরাশি!
ফিরিল আবার অশোকের ভাব
প্রমোদে পূরিল প্রাণ—
এখানে সেখানে বেড়ায় খেলিয়া
হরষে গাহিয়া গান।
অশোক মালতী মিলিয়া দুজনে
জোনাকের আলো জ্বালি
একই কুসুমে মাখায় বরণ,
মধু দেয় ঢালি ঢালি!
বরষের পরে এল হরষের যামিনী
আবার মিলিল যত কুসুমের কামিনী!
জোছনা পড়িছে ঝরি সুমুখের সরসে—
টলমল ফুলদলে,
ধরি ধরি গলে দলে,
নাচে ফুলবালা-দলে,
মালা দুলে উরসে—
তখন সুখের তানে মরমের হরষে
অশোক মনের সাধে গীতধারা বরষে।