আমি মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে দূতের উদ্দেশে জিজ্ঞাসা করলেম, “আসছেন নাকি।”
চার দিক থেকে জবাব এল, “হাঁ, আসছেন।”
মন ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল, “কী করি! সবেমাত্র আমার ছয়তলা বাড়ির ছাদ পিটোনো চলছে; আর, সাজ-সরঞ্জাম সব তো এসে পৌঁছল না।”
উত্তর শোনা গেল, “আরে ভাঙো ভাঙো, তোমার ছ’তলা বাড়ি ভাঙো।”
মন বললে, “কেন।”
উত্তর এল, “আজ আগমনী যে। তোমার ইমারতটা বুক ফুলিয়ে পথ আটকেছে।”
মন অবাক হয়ে রইল।
আবার শুনি, “ঝেঁটিয়ে ফেলো তোমার সাজ-সরঞ্জাম।”
মন বললে, “কেন।”
“তোমার সরঞ্জাম যে ভিড় করে জায়গা জুড়েছে।”
যাক গে। কাজের দিনে বসে বসে ছ’তলা বাড়ি গাঁথলেম, ছুটির দিনে একে একে সব-ক’টা তলা ধূলিসাৎ করতে হল। কাজের দিনে সাজ-সরঞ্জাম হাটে হাটে জড়ো করা গেল, ছুটির দিনে সমস্ত বিদায় করেছি।
কিন্তু, মস্ত বড়ো রথের চুড়ো কোথায়, আর মস্ত ভারি সমারোহ?
মন চার দিকে তাকিয়ে দেখলে।
কী দেখতে পেলে।
শরৎপ্রভাতের শুকতারা।
কেবল ঐটুকু?
হাঁ, ঐটুকু। আর দেখতে পেলে শিউলিবনের শিউলিফুল।
কেবল ঐটুকু?
হাঁ, ঐটুকু। আর দেখা দিল লেজ দুলিয়ে ভোরবেলাকার একটি দোয়েল পাখি।
আর কী।
আর, একটি শিশু, সে খিল্খিল্ করে হাসতে হাসতে মায়ের কোল থেকে ছুটে পালিয়ে এল বাইরের আলোতে।
“তুমি যে বললে আগমনী, সে কি এরই জন্যে।”
“হাঁ, এরই জন্যেই তো প্রতিদিন আকাশে বাঁশি বাজে, ভোরের বেলায় আলো হয়।”
“এরই জন্যে এত জায়গা চাই? ”
“হাঁ গো, তোমার রাজার জন্যে সাতমহলা বাড়ি, তোমার প্রভুর জন্যে ঘরভরা সরঞ্জাম। আর, এদের জন্যে সমস্ত আকাশ, সমস্ত পৃথিবী।”
“আর, মস্ত বড়ো? ”
“মস্ত বড়ো এইটুকুর মধ্যেই থাকেন।”
“ঐ শিশু তোমাকে কী বর দেবে।”
“ঐ তো বিধাতার বর নিয়ে আসে। সমস্ত পৃথিবীর আশা নিয়ে, অভয় নিয়ে, আনন্দ নিয়ে। ওরই গোপন তূণে লুকোনো থাকে