Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
জগতের জমিদারি - ১
জগতের জমিদারি
তুমি জমি কিনিতেই ব্যস্ত, জগতের জমিদারী বাড়াইতে মন দাও না কেন? তুমি তো মস্ত ধনী, তোমার অপেক্ষা একজন কবি ধনী কেন? তোমার জগতের অপেক্ষা তাঁহার জগৎ বৃহৎ। অত বড়ো জমি কাহার আছে? তিনি যে চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র দখল করিয়া বসিয়া আছেন। তোমার জগতের মানচিত্রে উত্তরে আফিসের দেয়াল,দক্ষিণে আফিসের দেয়াল,পূর্বেও তাহাই, পশ্চিমেও তাহাই। কবিদিগের কাছে, জ্ঞানীদিগের কাছে বিষয়কর্ম শেখ। তোমার জগৎ-জমিদারীর সীমা বাড়াইতে আরম্ভ কর। আফিসের দেয়াল অতিক্রম করিয়া দিগন্ত পর্যন্ত লইয়া যাও, দিগন্ত অতিক্রম করিয়া সমস্ত পৃথিবী পর্যন্ত বেষ্টন কর, পৃথিবী অতিক্রম করিয়া জ্যোতিষ্কমন্ডলে যাও এবং সমস্ত জগৎ অতিক্রম করিয়া অসীমের দিকে সীমা অগ্রসর করিতে থাক। আমি তো দেখিতেছি তোমার যতই জমি বাড়িতেছে ততই জগৎ কমিতেছে। এ যেন ভয়ানক লোকসানের লাভ!
অল্প দিন হইল আমার এক বন্ধু গল্প করিতেছিলেন, যে, তিনি স্বপ্ন দেখিয়াছেন —জগৎ নিলাম হইতেছে, চন্দ্র সূর্য বিকাইয়া যাইতেছে। বোধ করি যেন এমন নিলাম হইয়া থাকে। ভাবুকগণ বুঝি পূর্বজন্মে চড়া দামে চন্দ্র সূর্য তারা বসন্ত মেঘ বাতাস কিনিয়াছিলেন, আর আমরা একটা স্থূল- উদর স্থূলদৃষ্টি ও স্থূলবুদ্ধি লইয়া নিজের ভারে এমনি অবনত হইয়া পড়িয়াছি, যে, ইহার উপরে এই সাড়ে তিন হস্তের বহির্ভূত আর কিছু চাপাইবার ক্ষমতা নাই। নিজের বোঝা যতই ভারী বোধ হইতেছে ততই আপনাকে ধনী মনে করিতেছি। ইহা দেখিতেছি না কত লোক জগতের বোঝা অবলীলাক্রমে বহন করিতেছেন।