জনক রাজার উক্তির তাৎপর্য এই যে, যাহা কিছুকে আমরা আমার বলি তাহার কিছুই আমার নয়। আমার সহিত তাহাদের ন্যূনাধিক সম্বন্ধ আছে এই পর্যন্ত, কিন্তু তাহাদের প্রতি আমার কিছু মাত্র অধিকার নাই। আমরা ষষ্ঠীকে যে সম্বন্ধ-কারক বলি তাহা অতি যথার্থ, কিন্তু ইংরাজেরা যে তাহাকে Possessive Case বলে তাহা অতি ভুল। মানুষের ব্যকরণে সম্বন্ধ-কারক আছে কিন্তু Possessive Case নাই। একটি পরমাণুও আমরা সম্পূর্ণ ভোগ করিতে পারি না, সম্পূর্ণ জানিতে পারি না, ধ্বংস করিতে পারি না, নিয়মিত কালের অধিক রাখিতে পারি না। এমন কি, আমাদের শরীর ও মনের সহিত আমাদের সম্বন্ধ আছে বটে, কিন্তু তাহাদের উপর আমাদের অধিকার নাই। আমরা নিতান্ত দরিদ্র, একটি ধনীর প্রাসাদে বাস করিতেছি। তিনি আমাদিগকে তাঁহার কতকগুলি গৃহসজ্জা ব্যবহার করিতে দিয়াছেন মাত্র। একটি মন দিয়াছেন, একটি শরীর দিয়াছেন, আরো কতকগুলি ব্যবহার্য পদার্থ দিয়াছেন। তাহার একটিকেও আমরা ভাঙিতে পারি না, স্থানান্তর করিতে পারি না। যদি তাহা করিতে চেষ্টা করি, তৎক্ষণাৎ তাহার শাস্তি ভোগ করিতে হয়। যদি কখনো ভ্রমক্রমে আমরা মনে করি ‘আমার শরীর আমার’ ও সেই মনে করিয়া তাহার প্রতি যথেচ্ছাচার করি, তৎক্ষণাৎ রোগ আসিয়া তাহার শাস্তি দেয়। এই জন্যই আমার শরীরকে পরের শরীরের মত অতি সন্তর্পণে রাখিতে হয়, যেন কে তাহা আমার জিম্মায় রাখিয়াছে; সর্বদা সশঙ্কিত, পাছে তাহাতে আঘাত লাগে, পাছে তাহাতে আঁচড় পড়ে, পাছে তাহা মলিন হয়। মনকে যদি তুমি মনে কর ‘আমার’ ও তাহার প্রতি যথেচ্ছা ব্যবহার কর, তবে চিরজীবন মনের যন্ত্রণা ভোগ করিতে হয়। এই জন্য আমরা মনকে অতি সাবধানে রাখি, একটি কঠোর হস্ত তাহাকে ছুঁইবামাত্র আমরা সশঙ্কিত হইয়া উঠি। মন যদি আমার নয়, শরীর যদি আমার নয় তো কে আমার?