পরিশিষ্ট
বহু শতাব্দীর বিস্মৃতির অতল গর্ভে ডুবিয়া গিয়া ভারত ও ইরানের বন্ধুত্ব লোপ পাইতে বসিয়াছিল, কিন্তু এশিয়ার এই নবজাগরণে আমাদের সেই পূর্বসম্বন্ধ ফিরিয়া আসিয়াছে।
আপনি এশিয়ার জাগরণের বার্তা বহন করিয়া আনিয়াছেন। বহুদিন পূর্বে যে সত্যের আলো ইরান ও ভারত জ্বালিয়াছিল, তাহা আবার আমাদিগকে প্রজ্বলিত করিতে হইবে। কিছু পূর্বে আমরা যে স্তোত্রটি পাঠ করিয়াছিলাম উহা ওই ভাবেরই দ্যোতক। আমাদের অন্তর আবার একীভূত হইবে এবং আত্মজ্ঞানের সন্ধানে এশিয়ার আকাশ বাতাসকে আলোড়িত করিবে।
অমরা এশিয়াবাসিগণ আপনার দেশের শ্রেষ্ঠ নরপতির নিকট কৃতজ্ঞ; কারণ তাঁহার বিরাট ব্যাক্তিত্ব ও বহুদূরপ্রসারী কল্পনার প্রভাবে এশিয়াতে নবযুগের প্রবর্তন করিয়া নিকটবর্তী দেশসমূহে আত্মবিশ্বাস ও আশার আলো জ্বালিয়া দিয়াছেন, আজিকার এই শুভ মুহূর্তে তাঁহার মহানুভবতাকে স্মরণ করিয়া আমরা তাঁহাকে আমাদের অন্তরের অনাবিল শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা নিবেদন করিতেছি। আমাদের এই অন্তরের শ্রদ্ধা ও প্রীতির বন্ধনকে আরও দৃঢ় করিবার জন্য আপনার ন্যায় শ্রেষ্ঠ মণীষীর আগমন আমাদের প্রাণকে সজীব করিয়া তুলিয়াছে।
এশিয়ার লুপ্ত গৌরব প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য আমরা এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করিয়াছি। ইরান ও ভারতের সমচেষ্টায় মানবসভ্যতা রচনায় আজ এশিয়াকে তাহার নিজস্ব সম্পদ দিতে হইবে। সেই স্মরণীয় মুহূর্তকে স্মরণ করিয়া আমাদের ইরান বন্ধুকে অভিনন্দিত করিতে আজ আমরা গর্বানুভব করিতেছি।
যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত
স্বদেশের মঙ্গলের জন্য যে-সমস্ত সাহসী সংগ্রাম করিয়া গিয়াছেন, যতীন্দ্রমোহন তাঁহাদের অন্যতম। মাতৃভূমির উন্নতি সাধনের জন্য কোনো প্রকার ত্যাগ স্বীকারেই তিনি কুন্ঠিত ছিলেন না। তিনি তাঁহার লাভজনক আইন ব্যাবসা পরিত্যাগ করেন এবং স্বয়ং আন্দোলনের আবর্তে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া সমগ্র পরিবারের সহিত অপরিসীম দুঃখের জীবন বরণ করিয়া লন। আচরণে মহৎ এবং সৌজন্যে সর্বজয়ী যতীন্দ্রমোহন সমগ্র ভারতের একজন সর্বজনপ্রিয় রাষ্ট্রনৈতিক নেতা ছিলেন, ভারতের জাতীয় জীবনের এই সংকট মুহূর্তে এরূপ একজন নেতাকে হারাইয়া দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হইল। দীর্ঘকাল রাজনৈতিক বন্দীরূপে আবদ্ধ থাকার জন্যই যে তাঁহার মৃত্যু এত ত্বরান্বিত এবং এত অসময়ে সংঘটিত হইল, তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। তিনি রুচিসম্পন্ন এবং শান্তিপ্রিয় লোক ছিলেন। কিন্তু যখন তাঁহার স্বদেশের আহ্বান আসিল, তখন তিনি স্বাধীনতার বেদিমূলে স্বীয় জীবন উৎসর্গ করার মধ্যেই আনন্দ উপভোগ করিলেন। যে জীবন মহৎভাবে উদ্যাপিত এবং অকুন্ঠিতচিত্তে উৎসর্গীকৃত, তাঁহার স্মৃতি ভারতের পক্ষে গৌরবের ও বেদনার।
বিঠলভাই প্যাটেল
বিঠলভাই-এর মৃত্যুতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক মহা সাহসী যোদ্ধার তিরোধান হইল। আত্মত্যাগী এই স্বদেশ প্রেমিক তাঁহার যাহা-কিছু মূল্যবান সমস্তই অকাতরে স্বদেশের সেবায় নিয়োজিত করিয়াছিলেন। দেশের সেবায় তাঁহার প্রয়োজন যখন একান্ত হইয়া উঠিল ঠিক সেই সময়েই নিষ্ঠুর কাল তাঁহাকে ছিনাইয়া লইয়া গেল। এতৎ সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা দুঃখের বিষয় এই যে, প্রিয় মাতৃভূমি হইতে সহস্র মাইল দূর প্রবাসে তাঁহাকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করিতে হইল। সমগ্র ভারতের সহিত মিলিত হইয়া আমিও এই পরলোকগত মহান নেতার স্মৃতির প্রতি শদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করিতেছি।