Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
ব্যক্তি প্রসঙ্গ- পরিশিষ্ট,৯৪
পরিশিষ্ট
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী
৪
৪
বর্তমান যুগে আমাদের জন্মভূমিতে আমাদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের প্রধান যোগসূত্র হইতেছে মহাত্মা গান্ধী এবং গান্ধীজীকে আমাদের মহান ভ্রাতারূপে জাতির পক্ষ হইতে স্বীকার করিয়া লইবার দিন আজ আসিয়াছে। আমি আশা করি, আমরা আন্তরিকভাবে আমাদের এই মনোভাবকে প্রকাশ করিব। কিন্তু কেবলমাত্র উচ্ছ্বাস্পূর্ণ গর্ববোধকে প্রশ্রয় দিয়া এই শুভক্ষণের যথার্থ ভাবধারাকে আমরা যেন হাল্কা করিয়া না ফেলি। যখন মহাত্মা গান্ধী তাঁহার দূঃখব্রত আরম্ভ করেন, তখন আমাদের দেশে এবং বিদেশে অনেক সংশয়বাদী তাঁহাকে বিদ্রূপ এবং ঠাট্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু তথাপি আমাদের চক্ষের সম্মুখে এমন ঘটনা ঘটিল, যাহাতে যুগ-যুগান্তের কুসংস্কার ও যুক্তিহীন বিধিনিষেধের কঠিন পাষাণ স্তূপ ভাঙিয়া চুরমার হইয়া গেল। এই-সমস্ত বিধিনিষেধ ও কুসংস্কার আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বনাশ সাধন করিতেছিল।
২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩২
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী
৫
৫
এই ধরনের উৎসবাদিতে মন যখন ভাবাবেগে কানায় কানায় পূর্ণ থাকে, মনের আবেগ প্রকাশ করিবার ভাষা যখন আমরা খুঁজিয়া পাই না, সেই-সকল ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য দেশের আমদানি করা লম্বা লম্বা বক্তৃতা আমি মোটেই পছন্দ করি না। এই-সকল ক্ষেত্রে বরং সময়োপযোগী যে-সকল বৈদিক স্তবস্তোত্রাদি পবিত্রমনা ঋষিদের অন্তরের অন্তঃস্থল হইতে স্বতঃস্ফুর্ত হইয়াছে, মনোভাব জ্ঞাপনের জন্য প্রার্থনার আকারে ওইগুলি আবৃত্তি করা যাইতে পারে।
মহাত্মা গান্ধী মানবজাতির ইতিহাসে এক নূতন অধ্যায়ের সূচনা করিয়াছেন। তাঁহার অদম্য মনঃশক্তি বলে তিনি এক তন্দ্রাচ্ছন্ন দেশবাসীকে জাগাইয়া তুলিয়া নূতন কর্মোদ্যমে তিনিই তাহাদিগকে সঞ্জীবিত করিয়া তুলিয়াছেন ও দেশবাসিগণের সমক্ষে ভবিষ্যৎ ভারতের এক অত্যুজ্জ্বল চিত্র তুলিয়া ধরিয়াছেন।
মহান কর্মপ্রচেষ্টায় সাফল্য অর্জনের জন্য মহাত্মাকে দীর্ঘজীবন দান করিবার জন্য ভগবৎ সমীপে প্রার্থনা জ্ঞাপন করা প্রত্যেকেরই এক পবিত্র কর্তব্যবিশেষ।