মর্মরিছে তরু অটল ভূধর,
দমিছে দাপেতে কাঁপছে শিখর—
‘সরোজিনী’ ও ‘প্রতিভা’ পড়িতে পড়িতে আমরা ‘দুঃখসঙ্গিনী’কে ভুলিয়া গিয়াছিলাম। দুঃখসঙ্গিনীতে আযসংগীত নাই, আযরক্ত নাই, যবন নাই, রক্তারক্তি নাই; ইহাতে হৃদয়ের আশ্রুজল, হৃদয়ের রক্ত ও প্রেম ভিন্ন আর কিছুই নাই। হৃদয়ের বৃত্তিনিচয়ের মধ্যে প্রেমে যেমন বৈচিত্র আছে এমন আর কিছুতেই নাই। প্রেমের মধ্যে দুঃখ আছে, সুখ আছে, নৈরাশ্য আছে, দ্বেষ আছে, এবং প্রেমের সহিত অনেকগুলি মনোবৃত্তি জড়িত! এখন কতকগুলি সমালোচক ধুয়া ধরিয়াছেন যে প্রেমের কথা কহিল বঙ্গদেশে অধঃপাতে যাইরে। এ কথার অর্থ খুব অল্পই আছে। হৃদয়ের শ্রেষ্ঠ বৃত্তি প্রেমকে অবহেলা করিয়া যিনি তেজস্বিতা সঞ্চয় করিতে চাহেন তিনি মানবপ্রকৃতি বুঝেন না। যে মনুষ্যের হৃদয়ে প্রেম নাই তেজস্বিতা আছে, তাহার হৃদয় নরক! কিন্তু যাহার হৃদয়ে প্রকৃত প্রেম আছে, তাহার তেজস্বিতা আছেই। তুমি কবি! নৈরাশ্য বিষাদ জনিত অশ্রুজল যদি তোমার হৃদয়ে জমিয়া থাকে, তবে তাহা প্রকাশ করিয়া ফলো! তাহা দমন করিয়া তুমি বলপূবক যেন ‘ভারত’ ‘একতা’ ‘যবন’ প্রভৃতি বলিয়া চিৎকার করিয়ো না। কবিতা হৃদয়ের প্রস্রবণ হইতে উত্থিত হয়, সমালোচকদের তিরস্কার হইতে উত্থিত হয় না। দুঃখসঙ্গিনীর বিষয় আমরা এই বলিতে পারি—তাহার ভাষা অতিশয় মিষ্ট। তিনি যেখানে কিছু বর্ণনা কররয়াছেন সেখানকার ভাষাই মিষ্ট হইয়াছে। তবে একটি কথা স্বীকার করিতে হয় যে, তাঁহার ভাবের মাধুয আপেক্ষা ভাষার মাধুয অধিকতর মন আকর্ষন করে। এই পুস্তকের মধ্যে হইতে আমরা অনেক সুন্দর পঙক্তি তুলিয়া দিবার মানস করিয়াছিলাম, কিন্তু বাহুল্য-ভয়ে পারিলাম না।