তোমার ভজনে ত্রিসন্ধ্যা-যাজনে,
তুমি সে গলার হারা।
রজকিনীরূপ কিশোরীস্বরূপ
কামগন্ধ নাহি তায়,
রজকিনী-প্রেম নিকষিত হেম
বড়ু চণ্ডিদাসে গায়।
আর এক স্থলে চণ্ডিদাস কহিয়াছেন–
রজনী দিবসে হব পরবশে,
স্বপনে রাখিব লেহা–
একত্র থাকিব নাহি পরশিব
ভাবিনী ভাবের দেহা।
কঠোর ব্রতসাধনা-স্বরূপে প্রেমসাধনা করা চণ্ডীদাসের ভাব, সে ভাব তাঁহার সময়কার লোকের মনোভাব নহে, সে ভাব এখনকার সময়ের ভাবও নহে– সে ভাবের কাল ভবিষ্যতে আসিবে। যখন প্রেমের জগৎ হইবে, যখন প্রেম বিতরণ করাই জীবনের একমাত্র ব্রত হইবে– পূর্বে যেমন যে যত বলিষ্ঠ ছিল সে ততই গণ্য হইত, তেমনি এমন সময় যখন আসিবে, যখন যে যত প্রেমিক হইবে সে ততই আদর্শস্থল হইবে– যাহার হৃদয়ে অধিক স্থান থাকিবে, যে যত অধিক লোককে হৃদয়ে প্রেমের প্রজা করিয়া রাখিতে পারিবে সে ততই ধনী বলিয়া খ্যাত হইবে– যখন হৃদয়ের দ্বার দিবারাত্রি উদঘাটিত থাকিবে ও কোনো অতিথি রুদ্ধ দ্বারে আঘাত করিয়া বিফলমনোরথ হইয়া ফিরিয়া না যাইবে– তখন কবিরা গাইবেন–
পিরীতিনগরে বসতি করিব,
পিরীতে বাঁধিব ঘর।
পিরীতি দেখিয়া পড়শি করিব,
তা বিনু সকলি পর।