Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)
চণ্ডিদাস ও বিদ্যাপতি - ৭
চণ্ডিদাস ও বিদ্যাপতি
পরকে আপন করিতে হইলে যে সাধনা করিতে হয়, যে তপস্যা করিতে হয়, সে কি সাধারণ তপস্যা? যে তোমার অধীন নহে, তোমার নিজেকে তাহার অধীন করা– যে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, তোমার নিজেকে তাহার কাছে পরতন্ত্র করা– যাহার সকল বিষয়ে স্বাধীন ইচ্ছা আছে, তোমার নিজের ইচ্ছাকে তাহার আজ্ঞাকারী করা– সে কি কঠোর সাধন!
যখন রাধিকা কহিলেন–
পিরীতি পিরীতি কি রীতি মূরতি
হৃদয়ে লাগল সে –
পরাণ ছাড়িলে পিরীতি না ছাড়ে,
পিরীতি গড়ল কে?
পিরীতি বলিয়া এ তিন আখর
না জানি আছিল কোথা!
পিরীতি কণ্টক হিয়ায় ফুটল,
পরাণপুতলী যথা।
পিরীতি পিরীতি পিরীতি অনল
দ্বিগুণ জ্বলিয়া গেল!
বিষম অনল নিবাইলে নহে,
হিয়ার রহল শেল!
তখন চণ্ডিদাস কহিলেন–
চণ্ডিদাস-বাণী শুন বিনোদিনি,
পিরীতি না কহে কথা–
পিরীতি লাগিয়ে পরাণ ছাড়িলে
পিরীতি মিলয়ে তথা!
বিদ্যাপতির ন্যায় কবিগণ যাঁহারা সুখের জন্য প্রেম চান, তাঁহারা প্রেমের জন্য এতটা কষ্ট সহ্য করিতে অক্ষম। কিন্তু চণ্ডিদাস জগতের চেয়ে প্রেমকে অধিক দেখেন–
পিরীতি বলিয়া এ তিন আখর,
এ তিন ভুবন- সার।
কিন্তু ইহা বলিয়াও তাঁহার তৃপ্তি হইল না, দ্বিতীয় ছত্রে কহিলেন–
এই মোর মনে হয় রাতি দিনে
ইহা বই নাহি আর!
প্রেমের আড়ালে জগৎ ঢাকা পড়ে, শুধু তাহাই নহে –
পরাণ-সমান পিরীতি রতন
জুকিনু হৃদয়-তুলে –
পিরীতি রতন অধিক হইল,
পরাণ উঠিল চূলে।