Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (https://rabindra-rachanabali.nltr.org)


চণ্ডিদাস ও বিদ্যাপতি - ৪
চণ্ডিদাস ও বিদ্যাপতি

বিধি যদি শুনিত, মরণ হইত,

      ঘুচিত সকল দুখ।

তখন

চণ্ডিদাস কয়, এমতি হইলে

      পিরীতির কিবা সুখ!

দুখই যদি ঘুচিল তবে আর সুখ কিসের? এত গম্ভীর কথা বিদ্যাপতি কোথাও প্রকাশ করেন নাই। যখন মিলন হইল তখন বিদ্যাপতির রাধা কহিলেন–

দারুণ ঋতুপতি যত দুখ দেল,

হরিমুখ হেরইতে সব দূর গেল।

যতহুঁ আছিল মঝু হৃদয়ক সাধ

সো সব পূরল পিয়া-পরসাদ।

রভস-আলিঙ্গনে পুলকিত ভেল,

অধরহি পান বিরহ দূর গেল।

চিরদিনে বিহি আজু পূরল আশ,

হেরইতে নয়ানে নাহি অবকাশ।

ভনহ বিদ্যাপতি আর নহ আধি,

সমুচিত ঔখদে না রহে বেয়াধি।

চিকিৎসক চণ্ডিদাসের মতে বোধ করি ঔষধেও এ ব্যাধির উপশম হয় না, অথবা এ ব্যাধির সমুচিত ঔষধ নাই। কারণ চণ্ডিদাসের রাধা শ্যামে যখন মিলন হয় তখন “ দুহুঁ কোরে দুহুঁ কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া “। কিছুতেই তৃপ্তি নাই –

নিমিখে মানয়ে যুগ কোরে দূর মানি!

যখন কোন ভাবনা নাই, যখন শ্যামকে পাইয়াছেন, তখনো রাধার ভয় যায় না –

এই ভয় উঠে মনে, এই ভয় উঠে,

না জানি কানুর প্রেম তিলে জনি ছুটে।

গড়ন ভাঙ্গিতে, সই, আছে কত খল –

ভাঙ্গিয়া গড়িতে পারে সে বড় বিরল।

যথা তথা যাই আমি যত দূর পাই,

চাঁদ মুখের মধুর হাসে তিলেকে জুড়াই।

সে-হেন বঁধুরে মোর যে জন ভাঙ্গায়

হাম নারী অবলার বধ লাগে তায়!

চণ্ডিদাস কহে, রাই, ভাবিছ অনেক –

তোমার পিরীতি বিনে সে জীয়ে তিলেক।

রাধা আগেভাগে অভিশাপ দিয়া রাখে, রাধা শূন্যের সহিত ঝগড়া করিতে থাকে! এমনি তাহার ভয় যে, তাহার মনে হয় যেন সত্যই